উদ্বিগ্ন: মহদিপুর সীমান্তে মোসাম্মাত দিলরোশন। নিজস্ব চিত্র
বছর তিরিশেক আগে রেল দুর্ঘটনায় খুইয়েছেন বাঁ পা। লাঠি নিয়েও দীর্ঘক্ষণ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা নেই। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মহদিপুর চেকপোস্টের সামনে আনমনা হয়ে বসে রয়েছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা, ষাটোর্ধ্ব মোসাম্মাত দিলরোশন। আনমনা কেন? দিলরোশন বলেন, “হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে তামিলনাড়ুর ভেলোরে গিয়েছিলাম। ভেলোর থেকে চিকিৎসা করিয়ে মালদহে আত্মীয়ের বাড়িতে বিশ্রাম নেব বলে ভেবেছিলাম। করোনা-আতঙ্কে ভিসা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরছি।’’ বাড়ি তাঁর বাংলাদেশের শিবগঞ্জের তারাপুর গ্রামে। সেখানে পরিবারের লোকজন উৎকণ্ঠায় আছেন, জানান দিলরোশন। নিজেও চিন্তায়। কারণ, অসুস্থ হলেও মাসখানেক আর চিকিৎসা করাতে এপারে আসতে পারবেন না তিনি।
দিলরোশনের মতোই বাড়ি ফিরতে চেয়ে এদিন সকাল থেকেই মালদহের মহদিপুর চেকপোস্টে ভিড় জমিয়েছেন দুই দেশের বহু নাগরিক। আর এই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চেকপোস্টের কর্তব্যরত কর্মীদের। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, দৈনিক ওপার থেকে এপারে আসেন ১৪০ থেকে ১৬০ জন। আর এপার থেকে ওপারে যান দেড়শোরও বেশি। তবে এ দিন সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। চার শতাধিক মানুষ এ দিন মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেছেন। চেকপোস্টের এক কর্মী বলেন, “আজ, শনিবার থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এপারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাসপোর্ট-ভিসা থাকা সত্ত্বেও ওপারের কেউ আসতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশের নাগরিক এপারে থাকলে যেতে পারবেন।”
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের জেরে যাতায়াতে রাশ টানা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে পণ্যবাহী লরি চলাচল বন্ধে এখনও কোন নির্দেশিকা আসেনি। যদিও এদিন বাংলাদেশে ছুটির দিন থাকায় মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করেনি। এই চলাচল আগামী এক মাসের জন্য পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়ে যাবে বলে দাবি আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ীদের।
বিষয়টি জানাজানি হতেই যেন বাড়ি ফেরার ধুম পড়ে গিয়েছে মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার মালদহে আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরতে এসেছিলেন বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জের বাসিন্দা অরুণ সরকার। এদিন সকালে দেশে ফেরার জন্য সীমান্তে হাজির হয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, “আচমকা জানতে পারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভিসা এক মাসের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাই ঝুঁকি না নিয়েই এদিনই দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য হাজির হয়েছি।”
বাংলাদেশ থেকে এপারে চিকিৎসার জন্য আসেন বিনয়কুমার সাহা। তিনি বলেন, “এদিন না আসতে পারলে এক মাস আর ভারতে আসা যাবে না। আর ভারতে না এলে চিকিৎসাও হবে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে এদিনই ভিসা নিয়ে এপারে চলে আসি।”
সীমান্তরক্ষী বাহিনী থেকে শুরু করে চেকপোস্টের কর্মীদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করতে দেখা যায়। এমনকি, বহু নাগরিককেও মুখে মাস্ক পরতে দেখা গিয়েছে। ওপার থেকে আসা কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্ক্রিনিং করা হচ্ছে চেকপোস্টে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। কারও শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকলেই মালদহ মেডিক্যালে পাঠানো হবে। এখনও সন্দেহজনক তেমন কিছু পাওয়া যায়নি মহদিপুর সীমান্তে।”