মেলানিস্টিক বাঘ। ছবি: সংগৃহীত।
দু’বছরের মাথায় আবার বিরল কালো (মেলানিস্টিক) বাঘের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ওড়িশায় সিমিলিপাল ব্যাঘ্রপ্রকল্পে। সে রাজ্যের বন দফতর জানিয়েছে চোরাশিকারিদের হানাতেই মারা পড়েছে বাঘটি।
বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে জঙ্গল লাগোয়া উদালা থানার তেন্তলা এবং বারিপদার বালিঘাট এলাকা থেকে দু’জন করে চোরাশিকারিকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে হত কালো বাঘের চামড়া এবং অন্যান্য দেহাংশ। সিমিলিপাল ব্যাঘ্রপ্রকল্পের সহকারী ক্ষেত্র অধিকর্তা (ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর) সম্রাট গৌড়া জানিয়েছেন, চামড়া, নখ, দাঁত ও অন্য দেহাংশের জন্য বাঘটিতে মেরেছে চোরাশিকারিরা। ধৃতদের সঙ্গে বড় কোনও চক্রের যোগাযোগ আছে কি না, তা জানতে শুরু হয়েছে তদন্ত।
উদ্ধার হওয়া বাঘের চামড়া-সহ ধৃতেরা। ছবি: সমাজমাধ্যম থেকে নেওয়া।
বাঘ সংরক্ষণে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা এনটিসিএ (ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি)-র কাছে এ বিষয়ে রিপোর্টও পাঠিয়েছেন সিমিলিপাল কর্তৃপক্ষ। গত ডিসেম্বরে সিমিলিপাল থেকেই ‘বিবাগী’ হয়েছিল বাঘিনি জ়িনত। চলে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গে। মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধেরি ব্যাঘ্রপ্রকল্প থেকে আনা আরও এক বাঘিনি যমুনাও একই সময় ময়ূরভঞ্জের সিমিলিপাল ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল বালেশ্বর জেলার কুলডিহা অভয়ারণ্যে। সে সময়ই ‘বায়োস্ফিয়ার রিজ়ার্ভ’ তকমা পাওয়া ওই অরণ্যে নজরদারির ব্যবাস্থা এবং সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
বাঁকুড়ার জঙ্গলে বন্দি জ়িনতকে ফেরত পাঠানোর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশা সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, “তোমরা তো খেয়াল রাখবে নিজেদের জঙ্গলের? যাতে তোমাদের বাঘ আমাদের এখানে না ঢুকে পড়ে, যাতে আমার গ্রামে আতঙ্ক না ছড়ায়।” বিরল কালো বাঘিনি চোরাশিকারের ঘটনায় আবার প্রশ্নের মুখে পড়ল সিমিলিপালের নিরাপত্তা। প্রসঙ্গত, সাধারণ ডোরাকাটা বাঘ এবং কালো বাঘ একই প্রজাতি। কোনও কোনও বাঘের ত্বকে রঞ্জক পদার্থ মেলানিনের আধিক্য ঘটায় দেহের বর্ণ সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে কালো হয়ে যায়। সেগুলিকেই ‘ব্ল্যাক টাইগার’, ‘মেলানিস্টিক টাইগার’ বা কালো বাঘ বলা হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ বাঘ দম্পতির দু’-তিনটি শাবকের মধ্যে একটির রং কালো। বস্তুত, বাঘের চেয়ে চিতাবাঘের (লেপার্ড) ক্ষেত্রে এমন ঘটনা অনেক বেশি। কালো চিতাবাঘকে বলা হয় ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’। সাম্প্রতিক সুমারিতে সিমিলিপালে ১৩টি ‘মেলানিস্টিক টাইগারের’ খোঁজ মিলেছে। জিনগত ভারসাম্যের প্রশ্নে কিন্তু এই রূপান্তর খুব কাম্য নয় বলেই মনে করেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা, বস্তুত, মেলানিজ়মের আধিক্য কমিয়ে সিমিলিপালের বাঘের হলুদ-কালো ডোরাদার চেনা অবয়ব ফেরাতেই মহারাষ্ট্র থেকে জ়িনত ও যমুনাকে এনেছিলেন সিমিলিপাল কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালে সিমিলিপালে ‘রহস্যমৃত্য়ু’ হয়েছিল একটি কালো বাঘের।