দিঘির চারপাশে এ বার তৈরি করা হচ্ছে নিকাশি-ব্যবস্থা। ছবি সংগৃহীত।
মহারাজার আমলের দিঘির চারপাশে এ বার তৈরি করা হচ্ছে নিকাশি-ব্যবস্থা। দিঘির চারপাশ খনন করে কংক্রিটের দেওয়াল তুলে তা তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হেরিটেজ প্রকল্পে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কোচবিহার। তারই অঙ্গ হিসাবে সাগরদিঘির চারপাশে ওই নিকাশি নালা তৈরি করা হচ্ছে। সে সঙ্গে হবে রাস্তার সংস্কার। ‘কবল স্টোন’ দিয়ে তৈরি হবে ফুটপাত। নতুন করে আলো দিয়ে সাজানো হবে সাগরদিঘির চারপাশ। প্রশাসন জানিয়েছে, আইআইটি খড়্গপুরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে করা হচ্ছে ওই কাজ। নিকাশি তৈরির কাজ করছে পূর্ত দফতর। দফতরের কোচবিহারের জেলা নির্বাহী বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘দ্রুততার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ে কাজ শেষ হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহার সদরকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণার কথা জানান। তার পর থেকেই খড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে শহরের হেরিটেজ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ করার কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে, জেলার ১৫৫টি নিদর্শনকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে রয়েছে সাগর দিঘি। সাগর দিঘি চত্বরকে কোচবিহার শহরের প্রাণকেন্দ্র বলেন অনেকে। সে দিঘি নিয়ে নানা পরিকল্পনা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর,, সাগরদিঘির চার পাশে যাতে জল না জমে, তাই নিকাশি তৈরি হচ্ছে। সে নিকাশিনালা মাটির নীচে থাকবে। সঙ্গে সাগরদিঘির চারদিকের রাস্তাও নতুন করে তৈরি করা হবে। পুলিশ সুপার ও জেলশাসকের দফতরের সামনে যে রাস্তা রয়েছে, তা হবে সাড়ে চার মিটারের। আর আদালত ও মহকুমাশাসকের দফতরের সামনের রাস্তা হবে সাড়ে পাঁচ মিটার। ওই দু’দিকে রাস্তা খানিকটা চওড়া হবে। তিন কোটি ৩০ লক্ষ টাকার ওই দু’টি কাজ করবে পূর্ত দফতর। তার বাইরেও ওই এলাকায় সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে। তার মধ্যে সাগর দিঘির ঘাট সংস্কার, ‘কবল স্টোন’ দিয়ে চারদিকে ফুটপাত তৈরি করা হবে। এ ছাড়া, সাগরদিঘির চারদিকে আরও আলোর কাজ করা হবে।
অনেকেই অবশ্য নিকাশির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ আমলের দিঘির চারপাশে কখনও জল জমতে দেখা যায়নি। সেখানে ওই নিকাশির প্রয়োজনীয়তা কি? আর ওই নিকাশির জন্য সাগরদিঘির মতো জায়গায় মশা ও মাছির উপদ্রব বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার মনে করেন, প্রাচীন নিদর্শনগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির খুব খারাপ অবস্থা। সাগরদিঘির নিকাশির পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে, সেগুলির সংস্কার প্রয়োজন ছিল।
প্রশাসনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই নিকাশি পুরোপুরি মাটির নীচে থাকবে। শুধু জল যেতে পারবে নিকাশিতে, কোনও আবর্জনা ঢুকতে পারবে না। সে জল নির্দিষ্ট পথে বড় নিকাশি নালায় গিয়ে পড়বে। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ওই কাজ শেষের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘হেরিটেজ নিয়ে শহরে অনেক কাজ হচ্ছে। ওই কাজ নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথাও বলেছি।’’
তথ্যসূত্র: জেলা প্রশাসন