খোঁজ: কমলপুর চা বাগানে কেন্দ্রীয় দল। নিজস্ব চিত্র
একই দিনে সমতল ও পাহাড়ে ঘুরল কেন্দ্রীয় দল। দলের প্রধান বিনীত জোশী এবং আরও দুই সদস্য মিলে ঘুরে দেখলেন পাহাড়ের পরিস্থিতি। আর অজয় গঙ্গোয়ার-সহ দু’জন ঘুরলেন শিলিগুড়ি ও তার আশপাশের কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিতে। দু’জায়গা ঘোরার পরে দুই দলের যা প্রতিক্রিয়া, তাতে স্পষ্ট, লকডাউন মেনে চলার ক্ষেত্রে তাঁরা এগিয়ে রাখছেন বিনয় তামাংয়ের খাসতালুককে। উল্টে শিলিগুড়িতে যে ভাবে কনটেনমেন্ট জ়োনে ঢোকা-বেরনো হচ্ছে, তাঁতে তাঁরা ক্ষুব্ধ। বলেছেন, বিষয়টি তাঁরা রাজ্য সরকারকে জানাবেন।
শিলিগুড়ির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ কলোনির বাসিন্দা এক রেলকর্মী করোনা উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মারা যান। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়, তাঁর অন্য রোগও ছিল। তবে পরিবারের দাবি, দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। রেলও নোটিস পাঠিয়ে এলাকা জীবাণুমুক্ত করে এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা কর্মীদের হোম কোয়রান্টিনে পাঠায়। সেই এলাকাটি এখন ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা। সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মী। তাঁদের সামনে দিয়েই লোকজন অবাধে যাতায়াত করছে, চলছে মোটরবাইক, টোটোও— দেখলেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। অজয় গঙ্গোয়ার এই দৃশ্যের ভিডিয়োও করলেন।
এ দিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন মহকুমার বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক। দলের সদস্যরা জানতে চান, কবে থেকে এই এলাকা কনটেনমেন্ট জ়োন হয়েছে? যে এলাকার ওই ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছিলেন, সেখানে লোকজন যাচ্ছে কি না? সে সব সঠিক ভাবে জানাতে পারেননি ওই আধিকারিক। তখন এলাকার একটি মুদির দোকান গিয়ে ব্যবসায়ী প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায়ের কাছে প্রতিনিধিদল জানতে চায়, কত লোক দোকানে আসছে, তারা মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করছেন কি না।
পাতিকলোনি এলাকায় ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে অজয় সরকারি আধিকারিককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘মাটিগাড়ার দিকে কী ভাবে যাব?’’ ওই আধিকারিক তাঁকে পাতিকলোনির মধ্যের পথটি দেখিয়ে দেন। তখন তিনি বলেন, ‘‘এ তো কনটেনমেন্ট জ়োন। এর মানে বোঝেন? এর মধ্য দিয়ে কেন যাব?’’ ওই আধিকারিক তখন ঠক্কর কলোনির রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অথচ সেই রাস্তা দিয়ে বার হওয়ার মুখে ব্যারিকেড রয়েছে দেখে প্রতিনিধিদলের সদস্য নেমে জানতে পারেন, সেটিও কনটেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে।
এর পাশাপাশি তাঁরা কমলপুর চা কারখানা, কাওয়াখালির সারি কেন্দ্রটিও ঘুরে দেখেন। সারি হাসপাতালে রোগীদের গোলমাল প্রসঙ্গে অজয় বলেন, ‘‘২৩ এপ্রিলের ঘটনা শুনেছি। পরীক্ষা দেরির জন্য কিছু রোগীদের ক্ষোভ ছিল। ভাঙচুর হয়েছে। পরিস্থিতি সামলে নেওয়া হয়েছে। এখন সমস্যা নেই। ১২-১৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা রিপোর্ট মিলছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কনটেনমেন্ট জ়োনে কী পরিস্থিতি ছিল, সকলেই দেখেছেন। আমরা যা দেখলাম তা রাজ্য সরকারকে জানাব।’’
বৃষ্টিভেজা পাহাড়ে অবশ্য বাজার এলাকা দেখে খুশি প্রতিনিধিরা। চকবাজার লাগোয়া বাজারে ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে বসেছিলেন। ব্যবসায়ীরা মাস্ক পরছেন, স্যানিটাইজ়ার রাখছেন দেখে প্রশংসা করেন। খদ্দের এলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কি না জানতে চান। আবার লকডাউনের মধ্যেও শপিং মল খোলা দেখে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতির খোঁজ নেন। রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন।
ইডেন জেলা হাসপাতালে ঢুকে সেখানকার পরিকাঠামো, পরিষেবা নিয়ে খোঁজ করেন। হ্যাপি ভ্যালি ও চুংথুং চা বাগানে গিয়ে সেখানে নিয়ম মেনে লকডাউন পরিস্থিতিতে ২৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে কি না, সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। শ্রমিকেরা মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করছেন কী ভাবে তা জানতে চান। ইডেন হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধিদলকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তাঁরা প্রস্তুত। সন্দেহভাজন রোগী এখন নেই। এমন কেউ এলে নমুনা পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে। ভারত-নেপাল সীমান্তও ঘুরে দেখেন।
পরে বিনীত জোশী বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির চেয়ে পাহাড়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। লকডাউন মানা হচ্ছে। যদিও এদিন বৃষ্টিতে লোক কম রয়েছে। বাজারে ব্যবসায়ীরা নিয়ম মানছেন। এটা ভাল।’’ সূত্রের খবর, বুধবার কেন্দ্রীয় দল ফিরে যেতে পারে।