সমস্যায়: চরম অনটনের মধ্যে দিন কাটছে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
বাড়ির বাইরে বের হলে তবেই রোজগার। সকলের সংগৃহীত ওই রোজগারেই চলে ভরনপোষণ। কিন্তু করোনা বিধিনিষেধের জেরে বাইরে বেরনো বন্ধ। রোজগার হারিয়ে তাই চরম দুর্দশায় কাটাতে হচ্ছে বৃহন্নলাদের।
বালুরঘাট শহরের সাহেব কাছারির শান্তিময় ঘোষ কলোনির বাসিন্দা তৃতীয় লিঙ্গের ১৬ জন এখন নিজেদের বাড়ির চার দেওয়ালের গন্ডির মধ্যে আটকে। অভাবের সঙ্গে জুঝতে হচ্ছে নদী, চুমকি, পলি, টুম্পা, পায়েল হিজরানিদের। প্রতিবেশিদের কাছ থেকে কার্যত আলাদা ওঁদের জীবনযাপন। ফলে ঘরে-বাইরে বিধিনিষেধে অবরুদ্ধ ওঁরা।
ওঁদের গুরুমা পারুল হিজরানি বলেন, ‘‘করোনা বিধিনিষেধে বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মত অনুষ্ঠান বন্ধ। বাসিন্দাদের বাড়িতেও ঢোকা বারণ। সকালের দিকে এক-দু’জন বের হলেও অনেকে দূর থেকে দেখেই দরজার তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।’’ রোজগার একদম শূন্য। সঞ্চয়ও শেষ। দু’বেলা এতগুলো পেট কী ভাবে চলবে ভেবে গুরুমার মুখ থমথমে।
এ বারের বিধানসভা ভোট দিয়েছেন ওরা। প্রত্যেকের রেশন কার্ডও রয়েছে। শিখা, পায়েল, ঝুমকিরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘ভোটের আগে নেতারা কত আশ্বাস দিয়ে গেলেন। রেশনকার্ড বিপিএল হবে। ভাতার ব্যবস্থা হবে। এখন এই বিপদের সময় কেউ নেই। প্রতি মাসে রেশনের দু’কেজি চাল ও দু’কেজি আটায় কোনওরকমে চলছে তাদের। গুরুমার কথায়, ‘‘জামাকাপড়, ওষুধপত্র ও অন্যান্য খরচের জন্য তো টাকার দরকার।’’ রোজগার বন্ধ হয়ে পড়ায় হাতে টাকাও নেই জানিয়ে তাঁর আক্ষেপ, বাস, ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাঁদের দলের অনেকে রায়গঞ্জ, মালদহ-সহ অন্য জেলায় আটকে রয়েছেন।
চরম সমস্যার মধ্যে দিন কাটছে জানিয়ে নদী, পায়েলদের দাবি, সরকার তাঁদের ভোটের অধিকার দিয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আলাদা শয্যার ব্যবস্থা করেছে। এ বার ভাতার ব্যবস্থা করলে তাদের দুর্দশা দূর হয়। বালুরঘাটের সদর মহকুমাশাসক সুমন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বৃহন্নলাদের সমস্যার বিষয়ে জানা ছিল না। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’