ছবি সংগৃহীত।
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির একাংশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নবান্ন। প্রসাসন সূত্রে খবর, ওই জেলাগুলিতে সংক্রমণ একটা পর্যায় পর্যন্ত নেমে আর কমছে না। কখনও বাড়ছেও।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ বেড়েছে। সেই কারণে উত্তরবঙ্গের পথেই তৃতীয় ঢেউ এ রাজ্যে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেই বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন। সেই কারণে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কয়েক দিন ধরে উত্তরবঙ্গে ঘুরছেন রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা ওএসডি গোপালকৃষ্ণ ঢালি। বুধবার সফরের শেষ দিনে তিনি জলপাইগুড়িতে যান। কোথায় কী খামতি রয়েছে দেখে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনকে নির্দেশও দিচ্ছেন। ফিরে গিয়ে রিপোর্টও দেবেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এখনও অনেক জায়গায় সবাই মাস্ক পরছেন না। বাইরে বার হলে দূরত্ববিধিও ঠিকমতো মানছেন না। বাজারে কেনাবেচার ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার হচ্ছে খুবই কম।’’ তিনি আরও বলেন, "উত্তরবঙ্গ দিয়ে তৃতীয় ঢেউ ঢোকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলিতে সংক্রমণ বেড়েছিল। তাই উত্তরবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পঙে সংক্রমণ একটা পর্যায়ের পরে কমছে না বলে চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর। কখনও রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে থাকছে দার্জিলিং জেলা। জলপাইগুড়িতেও কিছুদিন আগে দৈনিক সংক্রমণ বেশি মিলছিল। গত সোমবার থেকে তিন দিন দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় ঘোরেন গোপালকৃষ্ণ। পাহাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা নিয়েও রিপোর্ট নেন। প্রথম দিন উত্তরবঙ্গ সফরে এসে কালিম্পঙে যান তিনি। সেখানে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, হাসপাতালের সুপার, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হাসপাতাল ঘুরে দেখেন। মঙ্গলবার গিয়েছিলেন দার্জিলিঙে। এ দিন জলপাইগুড়িতে।
রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওএসডি’র পর্যবেক্ষণ, পাহাড়ে দার্জিলিঙে ৮৮ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরছেন। দার্জিলিঙের চেয়ে কালিম্পঙে মাস্কের ব্যবহার একটু কম। সমতলে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে আরও অনেকটাই কম। বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির মতো শহরে বাজার এলাকায় ভিড়, মাস্ক না পরার প্রবণতা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য দফতর এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। তাঁর বক্তব্য, সংক্রমণ রুখতে তাই এই বিষয়টিতে জোর দিতে হবে। পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেই সঙ্গে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে টিকাকরণে আরও জোর দিতে বলেন। জেলাগুলিকে দৈনিক টিকাকরণ বাড়াতে বলেছেন। টিকার সরবরাহে খামতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। গোপালকৃষ্ণ বলেন, ‘‘এখন রাজ্যে টিকার সরবরাহ যথেষ্টই। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ির মতো জেলায় প্রতিদিন গড়ে কুড়ি হাজার উপভোক্তাকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছি।’’ জেলায় টিকা দেওয়ার সিরিঞ্জের অভাবের কথা জানালে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, "সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের তরফেও কনটেনমেন্ট জ়োন করে কড়াকড়ি, বাজার এলাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হয়েছে।