বাঁশিতে স্ত্রীর পছন্দের সুর বাজিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরছেন অখিল। — নিজস্ব চিত্র।
এক বিকেলে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান স্ত্রী। ঘটনার ১১ বছর পর আজও স্ত্রীর ছবি বুকে নিয়ে বাঁশির সুরে তাঁকেই খুঁজে বেড়ান কোচবিহারের নিশিগঞ্জের সত্তরোর্ধ্ব অখিল বিশ্বাস। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সাইকেল চালিয়ে গ্রামের পর গ্রাম খুঁজে বেড়ান নিজের স্ত্রীকে।
নিশিগঞ্জের ছিটকিবাড়ি গ্রামে ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল অখিলের। অন্যের জমিতে চাষ করে দিব্য কাটছিল জীবন। অবসর সময়ে বাঁশি হাতে তুলে নিতেন অখিল। স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে শুনতেন অখিলের বাজনা। এক বিকেলে হঠাৎ দেখেন স্ত্রী বাড়ি নেই। বহু খোঁজাখুঁজির পরও খোঁজ মেলেনি। এ ভাবেই কেটে গিয়েছে ১১টি বছর। কিন্তু হতাশ হননি অখিল। স্ত্রীর খোঁজ আজও চলছে বহাল তবিয়তে, নিজস্ব ঢঙে।
স্ত্রীর ছবি হাতে গ্রামে গ্রামে তাঁকেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন অখিল। — নিজস্ব চিত্র।
অখিল বিশ্বাস করেন, এক দিন স্ত্রীকে ঠিক খুঁজে পাবেন। বাঁশির চেনা সুর শুনে স্ত্রী ঠিক ফিরবেন তাঁর কাছেই। ২০১২-এর ১৮ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়েছিলেন অখিলের স্ত্রী অন্নরানি। বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৩ বছর। নিখোঁজ হওয়ার পর এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ খুঁজে বার করতে পারিনি অন্নরানিকে। ছেলেমেয়েরা এখন বড় হয়েছে। সংসারের ভারও সন্তানদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন অখিল। আর সেই অবসরে পাঞ্জাবির পকেটে স্ত্রীর ছবি, সাইকেল ও বাঁশি নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা— গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাঁশিতে সুর তোলেন অখিল। অখিল বলেন, ‘‘বাঁশির সুর স্ত্রীর খুব পছন্দের ছিল। আমি যখন কাজ সেরে বাড়িতে আসতাম এবং বাঁশিতে সুর তুলতাম, স্ত্রী মুগ্ধ হয়ে সেই সুর শুনত।’’ অখিলের আশঙ্কা, ‘‘হয়তো আমার স্ত্রীকে কেউ জোর করে আটকে রেখেছেন। এক দিন এই বাঁশির সুর শুনে আমাকে চিনতে পারবে। স্ত্রীকে আবার খুঁজে এনে নতুন করে ঘর বাঁধব।’’ সাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে স্ত্রীর খোঁজ চালাচ্ছেন অখিল। বাঁশির সুরে আজও ‘তোমাকে চাই’য়ের সুর।