বানভাসি তোর্সা নদী। নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে জল বাড়তে শুরু করেছে কোচবিহারের প্রত্যেকটি নদীতে। হাজার হাজার বিঘের ফসলের খেত চলে গিয়েছে জলের তলায়। একাধিক জায়গায় শুরু হয়েছে নদীর ভাঙন। এই অবস্থার মধ্যেই উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ১৯ জুন পর্যন্ত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সাধারণ মানুষ থেকে কৃষকদের সতর্কবার্তাওদেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ মৌসম সেবা কেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সে দিক থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে কোচবিহারে চারশো মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত হচ্ছে পাহাড়েও। এই কারণে তোর্সা, রায়ডাক, কালজানি সব নদীর জলস্তর অনেক বেড়ে গিয়েছে। একাধিক নদীতে বিপদসীমার কাছ দিয়ে জল বইছে। আর স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রভাব পড়ছে বাসিন্দাদের জীবনে। কোচবিহারে নদী সংলগ্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে অসংরক্ষিত এলাকার বাসিন্দাদের প্রত্যেকের বাড়িঘর জলে ডুবে যায়। তাঁদের ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো হবে। কোচবিহার জেলা প্রশাসনের তরফে এই নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চব্বিশ ঘন্টার জন্য জেলা ও ব্লক স্তরে একটি করে ফ্লাড কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আগামী ১৮ জুন পর্য়ন্ত সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যে কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুততার সঙ্গে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে প্রশাসন।
কোচবিহারে এই সময়ে ধান, পাট ও আনাজ চাষ হচ্ছে। ধানে চাষে সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিতে ধানের বীজতলা, পাট খেত জলের নীচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাতে দুই ফসলেই ক্ষতি হবে। একই ভাবে আনাজের ক্ষেত্রেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে বাজারে আনাজের দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে। গবাদিন পশুর ক্ষেত্রেও বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগামী চার দিন ভারী বৃষ্টিপাত হবে। নদীর জল বাড়ছে। সেদিকে তাকিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”