মালদহের বৈষ্ণবনগরে তৃণমূলের কর্মসূচিতে চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর দিন সেমিনার কক্ষে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তী। কেন তিনি সেখানে ছিলেন, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্নও উঠেছে। বিতর্কের আবহে আইএমএ-র মালদহ শাখার সভাপতির পদ থেকেও সরানো হয়েছে তাঁকে। এ বার সেই চিকিৎসকের দেখা মিলল তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচিতে। বৃহস্পতিবার মালদহের বৈষ্ণবনগরে পিটিএস মোড়ে তৃণমূলের একটি পথসভা ছিল। গঙ্গা ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকার কেন সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না, তা নিয়ে সুর চড়াচ্ছিলেন শাসকদলের নেতারা। ওই মঞ্চেই দেখা মেলে তাপসেরও।
শাসকদলের কর্মসূচির মঞ্চে ‘বিতর্কিত’ চিকিৎসকের উপস্থিতির ছবি ছড়িয়ে পড়তেই জেলার রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। কেন ওই চিকিৎসক তৃণমূলের মঞ্চে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। বাম-বিজেপি উভয়েই খোঁচা দিতে শুরু করেছে। বিজেপির মালদহ উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের কথায়, “এটাই তো তৃণমূলের কালচার। যে ডাক্তারকে তাঁরই সংগঠন বহিষ্কার করে, সেই ডাক্তারকে তৃণমূল সংবর্ধিত করে এবং সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাপস চক্রবর্তী ডাক্তারদের মাঝে থেকে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছিলেন। আজ তো এটাই প্রমাণ হচ্ছে।”
খোঁচা দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রও। শাসকদলকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূল দল ও রাজ্য সরকার গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গঙ্গাপ্রাপ্তি করিয়ে দিয়েছে। সমাজমাধ্যমে সন্দীপ ঘোষেরও একটি ছবি ঘুরছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি সেখানে সবুজ আবির মেখে দাঁড়িয়ে আছেন।” নির্যাতিতার মৃত্যুর পর সেমিনার কক্ষে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁদের প্রত্যককে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা উচিত বলে দাবি এই সিপিএম নেতার।
যদিও এই বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের মালদহ জেলার মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর ব্যাখ্যা, ওই চিকিৎসক তৃণমূলের সমর্থক। তিনি বলেন, “বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে কোনও ব্যক্তিকে তাঁর পদ থেকে সরানো হবে কি না, তা নিয়ে আইএমএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোথায় কে আসছেন, তার দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তায় না। তিনি আমাদের দলের সমর্থক ছিলেন। চিকিৎসক সংগঠনের নেতা ছিলেন। হয়তো তিনি কোনও কারণে আমন্ত্রিত ছিলেন, তাই গিয়েছেন। কিন্তু সিপিএম বা বিজেপির মুখে এই ধরনের কথা মানায় না।”
বৃহস্পতিবার মালদহে শাসকদলের ওই কর্মসূচিতে রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান-সহ মালদহ ও মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্ব সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আব্দুল রহিম বক্সীর অবশ্য দাবি, চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে মঞ্চে থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন এড়়িয়ে তিনি বলেন, “ভাঙন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদ মঞ্চে বহু সাধারণ নাগরিক এসেছিলেন। তিনিও সাধারণ নাগরিক হিসাবেই আসেন। আরজি করের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দোষীকে আড়াল করছে না। বিষয়টি বিচারাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
তৃণমূলের কর্মসূচিতে থাকা প্রসঙ্গে চিকিৎসকের কোনও প্রতিক্রিয়া না মিললেও, সম্প্রতি আইএমএ-র পদ খোয়ানো বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। তাপস বলেছিলেন, “আমি ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য। প্রতি মাসে দুই-তিন আমাদের সংগঠনের বৈঠক হয়। ৯ অগস্টও বৈঠক ছিল। বৈঠকের মাঝপথে হঠাৎ আমাদের কাছে মর্মান্তিক খবরটি পৌঁছয়। বৈঠকের শেষাংশে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল হাসপাতালে গিয়ে আমাদের দাবি আরজি কর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবে। সেই প্রতিনিধিদলে আমিও ছিলাম। আরজি করে গিয়ে দেখালাম, সেখানে অনেক পুলিশকর্মী রয়েছেন। যে পুলিশ আধিকারিক সেই সময় দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর থেকে অনুমতি নিয়েই আমরা গিয়েছিলাম। তিনি একজন পুলিশকর্মীকে বললেন, আমাদের যে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি যে ঘরে নিয়ে গেলেন, সেটি সেমিনার হল।”