RG Kar Audio Case

অডিয়ো ক্লিপ সত্য, যাচাই করে দেখেছি, কলতানের গ্রেফতারির পর সাংবাদিক বৈঠকে জানাল পুলিশ

জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে হামলার অভিযোগ তুলে শুক্রবার যে অডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল, তার সত্যতা নিয়ে সংশয় নেই। সাংবাদিক বৈঠক করে জানাল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:১৬
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা। ছবি: সংগৃহীত।

জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে হামলার অভিযোগ তুলে শুক্রবার যে অডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল, তার সত্যতা নিয়ে সংশয় নেই, সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানাল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। ওই অডিয়োর ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত। তাঁর গ্রেফতারির পর শনিবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করেছে পুলিশ। জানানো হয়েছে, ওই অডিয়োর ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হালতুর বাসিন্দা ধৃত সঞ্জীব দাস অডিয়োর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। কলতানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Advertisement

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে সাংবাদিক বৈঠকে ডিসি অনীশ সরকার বলেন, ‘‘ভাইরাল অডিয়োতে দু’জনের মধ্যে কথোপকথন শোনা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন সঞ্জীব দাস, হালতুর বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য জন কলতান দাশগুপ্ত, সিপিএমের যুব সংগঠনের নেতা। ওই অডিয়ো সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে। আমরা তার সত্যতা যাচাই করে দেখেছি। অডিয়োর সত্যতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’ যদিও এই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

পুলিশ আরও জানায়, ধৃত সঞ্জীব ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন যে, অডিয়োতে তাঁর গলা শোনা গিয়েছে। কলতানকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দু’জনকেই আদালতে হাজির করিয়ে ১৪ দিনের হেফাজত চাইবে পুলিশ। অনীশ বলেন, ‘‘তদন্তের সময় এঁদের স্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখব। আইনানুগ পদ্ধতিতে তদন্ত হবে। অডিয়োতে আমরা আরও তিন জনের নাম পেয়েছি। সাহেব, দাদু এবং বাপ্পা। তাঁরা কারা, এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে তাঁরা কী ভাবে যুক্ত, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

Advertisement

অভিযোগ, সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে যেখানে আরজি করের বিচারের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা ধর্নায় বসেছেন, সেখানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অডিয়ো প্রকাশ করে দাবি করেন, হামলার চক্রান্ত করছে বিরোধীরা। তার পর সেই হামলার দায় চাপানো হবে শাসকদলের উপর। পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে নবান্নে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

অডিয়ো সংক্রান্ত মামলায় ধৃত সঞ্জীবের রাজনৈতিক পরিচয় জানায়নি পুলিশ। তাদের বক্তব্য, সঞ্জীবের ফোনে কিছু নাম পাওয়া গিয়েছে। তার ভিত্তিতেও তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৪, ৩৫২, ৩৫৩-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। কলতান নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁকে গ্রেফতারির নেপথ্যে রয়েছে কোনও ‘ষড়যন্ত্র’।

কী শোনা গিয়েছিল প্রকাশ্যে আসা সেই কথোপকথনে?

কুণালের প্রকাশ করা অডিয়োয় এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সাহেব অর্ডার করেছে সল্টলেক ওড়ানোর জন্য।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘অর্ডার হলে করে দে।’’ জবাবে প্রথম ব্যক্তি বলে, ‘‘যারা পার্টনার আছে সবাই প্রশ্ন করছে।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘‘কিছু ভেবেই তো বলেছে।’’ তা শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি এত বছর এই কাজ করেছি, কোনও দিন ভয়ডর লাগেনি। কিন্তু এখন এটাতে বিবেকে লাগছে। করাটা কি ঠিক হবে? ওরা তো লোকের জীবন বাঁচায়।’’

ফোনালাপ এখানেই শেষ নয়। এর পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘তোকে তো ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।’’ প্রথম ব্যক্তির জবাব, ‘‘ছেলেরা মদ খেয়ে যায়। মারতে গিয়ে বেহাত যদি কিছু হয়ে যায়, সেটা তো চিন্তার বিষয়।’’ শুনে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেটা ওকে বল, আমার এমন মনে হচ্ছে, কী করব?’’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘বাপ্পাদাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাপ্পাদা বলল, জানোয়ার হয়ে যায়নি এখনও।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তির নির্দেশ, ‘‘ওই মতো করেই কর।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দাদু বলছে, নবান্নে মিটিং হয়নি। ওরা তো সল্টলেকে ফেরত চলে আসছে। ভাববে শাসকেরা মারটা মেরেছে।’’ তার পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘কী বলল কথাটা বুঝেছ? বলছে, পুরো দোষটা দিয়ে আরও অশান্তিটা পাকানো যাবে। তবে কলকাতার কাউকে দিয়ে নয়। বাইরের লোক।’’ সব শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘ঠিক আছে দেখছি। কী করব? মাথা ফাটানোটা কি ঠিক হবে?’’ শেষে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দেখ, খানিকটা যদি কিছু করা যায়।’’

শনিবার সকালে কলতানের গ্রেফতারির পর সুজন চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করছেন, এটি সাজানো। কাউকে বদনাম করে আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অডিয়োটি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে বলে দাবি বাম নেতার। বাম যুব নেতার গ্রেফতারি কিসের ভিত্তিতে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও। তাঁর মতে, বামেরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে অতিপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেফতার করা হল? ওই অডিয়ো ক্লিপ কী ভাবে কুণালের কাছে গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন বিজেপি নেতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement