সকালে দার্জিলিংয়ের অনেক হোটেলের জানালা খুললেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। —নিজস্ব চিত্র।
মুখভার দক্ষিণবঙ্গের। সকাল থেকেই মেঘলা কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলার আকাশ। টুপটাপ বৃষ্টিও শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু একেবারে উল্টো চিত্র উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে আকাশ জুড়ে ঝলমলে রোদ। ঝকঝকে আকাশের আড়াল থেকে স্পষ্ট ভাবে উঁকি দিতে দেখা যাচ্ছে শুভ্র, স্বচ্ছ কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। উত্তরের আকাশ এতটাই পরিষ্কার যে, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখা মিলছে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’ (কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দূর থেকে দেখতে ঘুমন্ত বুদ্ধের মতো লাগে বলে এমন নাম)-এর। এমনকি, রায়গঞ্জের কিছু অংশ থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।
এই মরশুমে যে সব পর্যটক দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে রয়েছেন, তাঁরা আরও বেশি করে উপভোগ করতে পারছেন কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। বিগত দু’দিন ধরে আকাশ একেবারে পরিষ্কার হওয়ার কারণে প্রায় সারা দিনই কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা। সকালে অনেক হোটেলের জানালা খুললেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। পর্যটন ব্যাবসায়ীদের মতে, কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তোলার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। গোটা নভেম্বর মাস জুড়ে এমনই রূপ থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
এই প্রসঙ্গে রাজ্য ইকো ট্যুরিজ়ম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘আমাদের পর্যটন ব্যবসা অনেকটাই নির্ভর করে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর। গোটা নভেম্বর মাস দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে বুকিং রয়েছে। এটাই প্রকৃত সময় ছবি তোলার জন্য। যার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোটোগ্রাফারেরা আসছেন শৈলশহর দার্জিলিংয়ে। ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর পূর্ণিমা। ওই সময় প্রচুর বুকিং রয়েছে।’’
কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ শোভাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থাও। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা রিজিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ইকো ট্যুরিজ়ম পার্ক’ (কেআরআইইপি) নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। কেআরআইইপি-র মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিমের কিছুটা অংশ। এ ছাড়াও ভুটান এবং বাংলাদেশের কিছু অংশও কেআরআইইপির আওতায় রয়েছে।
হালকা শীতও পড়তে শুরু করেছে দার্জিলিংয়ে। সন্ধ্যার পর থেকেই ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গে এখনও সে ভাবে শীতের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন জেলায় ভোরের দিকে শীত শীত আমেজ থাকলেও কলকাতায় তার লেশমাত্র নেই। তার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিপাতের কথা শুনিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘনিয়ে ওঠা নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বৃহস্পতিবার ভোরে। আপাতত দিঘার উপকূল থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সেটি। তবে ক্রমেই দক্ষিণ থেকে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব মুখে এগোচ্ছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে আগামী কয়েক ঘণ্টায় এই গভীর নিম্নচাপ আরও জোরদার হয়ে ঘনীভূত হতে পারে। আর এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব ক’টি জেলাতেই বৃহস্পতিবার থেকে চলতে পারে বৃষ্টি। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়াও। শনিবার অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর সেটি উপকূলবর্তী হতে পারে। সেই সময় নিম্নচাপের কেন্দ্রে যে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে, তার হাওয়ার গতিবেগ পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।