Mizoram Bridge Collapse

কেন শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে, প্রশ্ন

ভিন্ রাজ্যে কাজে না গেলে আটটা পেট চলবে কী ভাবে, প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “নিজেদের কোনও জমি নেই। গ্রামে কাজও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে কাজের জন্য স্বামীকে ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়েছে।”

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৩৪
Share:

মিজোরামের ব্রিজ দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ বছরের সাহিন আক্তার এর মাত্র চার মাস আগে বিয়ে করা স্ত্রী সাবিনা খাতুন ও তার শাহিনের মা শাহিনা বিবি ঘিরে প্রতিবেশীরা। ছবি স্বরূপ সাহা

ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু মালদহে নতুন ঘটনা নয়, দাবি জেলাবাসীরই। তাঁদের দাবি, কখনও বহুতল ভেঙে, কখনও নির্মীয়মাণ সেতু কিংবা পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। সম্প্রতি করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় জেলার একাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তা-ও কেন ভিন্ রাজ্যে ছুটছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, সে প্রশ্নই ফের উঠেছে বুধবার মিজোরামের আইজলে নির্মীয়মাণ রেল-সেতু ভেঙে জেলার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর পরে।

Advertisement

এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ১১ জন শ্রমিকই রতুয়া ২ ব্লকের পুখুরিয়া পঞ্চায়েতের চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা। মৃতদের তালিকায় ইংরেজবাজারের পাঁচ, গাজল এবং কালিয়াচকের এক জন করে পরিযায়ী শ্রমিকের নাম রয়েছে।

মৃত পরিযায়ী শ্রমিক সেনাউল হকের (৪৮) স্ত্রী মিলি বিবি বলেন, “ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় বড় ছেলের কোমর ভেঙে যায়। সে কাজ করতে পারে না। তার দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। আমাদের তিন ছেলে-মেয়ে আছে।” ভিন্ রাজ্যে কাজে না গেলে আটটা পেট চলবে কী ভাবে, প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “নিজেদের কোনও জমি নেই। গ্রামে কাজও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে কাজের জন্য স্বামীকে ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়েছে।”

Advertisement

তাঁর মতোই ছেলে সাহিন আখতারকে (২০) হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা সাহেনা বিবি। তিনি বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে ৪১০ নম্বর পেয়ে পাশ করে ছেলে মালদহ কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তিও হয়েছিল। তবে অভাবের জন্য পড়তে পারেনি। সংসারের হাল ফেরানোর জন্য বাবার সঙ্গে ভিন্ রাজ্যে কাজ করত। সেই ছেলেরই দেহ দেখতে হবে, ভাবলেই শরীর যেন কাঁপছে।” মিজোরামে দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন চৌদুয়ারের বাসিন্দা রেফাজুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, “চাঁদে অভিযান নিয়ে অনেকে মাতামাতি করছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দু’বেলা রুটি-রুজির কথা কেউ ভাবছেন না।”

যদিও মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “প্লাস্টিক, কার্পেট ক্লাস্টার জেলায় তৈরি হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা যাতে জেলায় কাজ করতে পারেন, সে জন্য ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের যুক্ত করার কাজও চলছে।”

গ্রামগুলিতে এ দিন পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি, ভিড় জমান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ইশা খান চৌধুরী বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রের কোনও সরকারই পরিযায়ী শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না। কংগ্রেস কেন্দ্রের সরকার থাকার সময় ১০০ দিনের প্রকল্প চালু করেছিল। এখন সে প্রকল্পও বন্ধ।” সিটুর জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহের মন্তব্য, “লক্ষাধিক শ্রমিক জেলা থেকে ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। তাঁদের সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কোনও তথ্যই থাকে না।” এ দিন গ্রামগুলিতে যান মালদহ জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তৃণমূলের রফিকুল হোসেন। তাঁর দাবি, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। তাই মানুষকে ভিন্ রাজ্যে ছুটতে হচ্ছে।” বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য ১০০ দিনের প্রকল্প বন্ধ রয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement