ফাইল চিত্র।
নেশামুক্তি কেন্দ্রের আবাসিক এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃ্ত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থানার কাশীবাটী এলাকার ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের সামনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম চেতন সিংহ (২৫)। তাঁর বাড়ি হেমতাবাদ থানার বাঙালবাড়ি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কৃষ্ণপুরের দধিকোটবাড়ি এলাকায়। ওই যুবককে খুনের অভিযোগ তুলে এ দিন ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, সে সময় বেগতিক বুঝে ওই কেন্দ্রের মালিক ও কর্মীরা পালিয়ে যান। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় ওই কেন্দ্রের আবাসিকদের একাংশকে তাঁদের পরিবারের লোকেরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। দীর্ঘ ক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে, পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যালে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে চেতনের দেহটি ময়না-তদন্ত করিয়েছে পুলিশ। ময়না-তদন্তের পুরো প্রক্রিয়া ভিডিয়ো রেকর্ডিংও করা হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে মৃতের বাঁ কান ও ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিন বিকালে চেতনের দাদা পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বপন সিংহ রায়গঞ্জ থানায় কারও নামোল্লেখ না করে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাফিলতি ও অবহেলায় চেতনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ জানান।
রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন মেনে মামলা দায়ের করা হবে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ জানা সম্ভব হবে।”
চেতন নিজেও পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর বাবা কানাই হায়দরাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। মা শান্তি বছর চারেক আগে, মারা গিয়েছেন। তাঁদের তিন ছেলের মধ্যে চেতন মেজো ছিলেন। স্বপন জানিয়েছেন, চেতন দীর্ঘদিন ধরে গাঁজার নেশা করতেন। নেশা ছাড়াতে মাস তিনেক আগে পরিবারের লোকেরা তিন হাজার টাকা ভর্তি ফি দিয়ে চেতনকে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করেন। তাঁর দাবি, এর পর থেকে প্রতি মাসে চেতনের থাকা ও খাওয়ার খরচ বাবদ ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিতেন। কিছু দিন আগে, চেতনের চিকিৎসার জন্য ওই কেন্দ্রের তরফে তাঁদের কাছে ২৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছিল।
স্বপন বলেন, “আমার ভাই পুরোপুরি সুস্থ ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্মীরা আমার ভাইয়ের দেহ মেডিক্যালে রেখে পালিয়ে যান। পরে আমাকে ফোন করে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। ওই কেন্দ্রের গাফিলতি ও অবহেলায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।” এ দিন ওই কেন্দ্রে গিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের হদিস মেলেনি। ওই কেন্দ্রের মোবাইল ফোনটিও দিনভর বন্ধ ছিল।