উত্তর ভারত জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে। কাশ্মীরে তুষারপাত চলছে। আর তার সঙ্গে উত্তুরে হাওয়া কোনও বাধা না পাওয়ায় হু হু করে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে ঢুকছে। আর সে কারণেই তাপমাত্রার পারদ নামছে তরতরিয়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশে শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নতুন বছর পড়তেই সেই পরিস্থিতি বদলে যায়। তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়।
জন্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬ ডিগ্রি নীচে নেমে গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল শ্রীনগরে এই মরসুমের শীতলতম দিন। গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এতটা নামেনি বলেই মৌসম ভবন সূত্রে খবর। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি শ্রীনগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে।
পহেলগাঁওয়ে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে হিমাঙ্কের ৯ ডিগ্রি নীচে। গুলমার্গেও একই পরিস্থিতি। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে।
লাদাখে এবং লেহর পরিস্থিতি ভয়াবহ। বছরের শুরুতেই লাদাখের জাস্করের পাদুমে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল হিমাঙ্কের ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। লাদাখে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৮-১০ ডিগ্রি নীচে ঘোরাফেরা করছে।
দ্রাসে তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নীচে। কার্গিলে হিমাঙ্কের ১৭ ডিগ্রি নীচে এবং লেহতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে।
জম্মুতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কাটরায় ৫ ডিগ্রি। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়ায় শ্রীনগরে ডাল হ্রদের একাংশ জমে গিয়েছে।
হিমাচল প্রদেশেও তরতরিয়ে নেমেছে তাপমাত্রা। কোনও কোনও জায়গায় তুষারপাতও হয়েছে। লাহুল-স্পিতি, কিন্নৌর, কুলু, কাংড়া, মান্ডি এবং শিমলায় তুষারপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবাহওয়া দফতর। সঙ্গে বৃষ্টিপাতও হতে পারে আগামী কয়েক দিন। সোলাংয়ে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে গিয়েছে। মানালিতে তাপমাত্রা ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সুন্দরনগরে হিমাঙ্কের ১.৪ ডিগ্রি নীচে তাপমাত্রা ঠেকেছে।
জম্মু-কাশ্মীরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি-সহ উত্তর ভারত জুড়ে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। দিল্লিতে এই মরসুমের শীতলতম দিন ছিল শুক্রবার। আয়ানগরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি নীচে ছিল। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মৌসম ভবন সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, তাপমাত্রা আরও নামবে, সঙ্গে থাকবে ঘন কুয়াশাও। দিল্লিতে শনিবার ভোর সাড়ে ৫টায় দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারের নীচে নেমে গিয়েছিল। যার জেরে ট্রেন, বিমান পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, কানপুর, আগরা, মেরঠ, মথুরা, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, বাহরাইচ, ফতেহপুর, মৈনপুরী জেলায় কুয়াশার দাপট চলবে। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু অংশে শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি বজায় থাকবে। তবে তার পর থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে পরিস্থিতি। তবে এখনই ঠান্ডার কামড় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। পাল্লা দিয়ে বাড়বে কুয়াশাও। মধ্যপ্রদেশলাগোয়া জেলাগুলি বাদে বাকি জেলাগুলিতে ঘন কুয়াশার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ২৫টি জেলায় এ বিষয়ে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
লখনউয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে। অন্য দিকে, কানপুরে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে। গত দু’বছরে জানুয়ারির মধ্যে যা সর্বনিম্ন। শনিবার লখনউয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মেরঠে ৪ ডিগ্রি, প্রয়াগরাজে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কানপুরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্জাব এবং হরিয়ানাতেও শৈত্যপ্রবাহ চলছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, শুক্রবার হরিয়ানায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিসার ৪ ডিগ্রি, ভিওয়ানি ৫.৮ ডিগ্রি, কারনালে ৪.৮ ডিগ্রি, রোহতক ৬.২ এবং অম্বালায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্জাবেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছে। বালাচাউরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভাতিন্ডায় ৩.৬, গুরুদাসপুরে ৩.৮, লুধিয়ানায় ৪.৬, অমৃতসরে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজস্থানের বহু জায়গায় তাপমাত্রা শূন্য থেকে হিমাঙ্কের নীচে পৌঁছেছে। চুরুতে শুক্রবার রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে তাপমাত্রা কম মাউন্ট আবুতে। সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬ ডিগ্রি নীচে পৌঁছেছে। সীকরে হিমাঙ্কের ১.৫ ডিগ্রি নীচে, ফতেহপুরে হিমাঙ্কের ১.৮ ডিগ্রি নীচে ছিল শুক্রবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা নামতে থাকায় জয়পুরে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছিল প্রশাসন।