পরিযায়ী শ্রমিক বংশীলাল মণ্ডল।
রোজগারের আশায় লকডাউনের মধ্যেই পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে। সামনে পুজো। তাই কিছু টাকা আয়ের পরে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। শনিবার ট্রেন রয়েছে, টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছে বলে বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি কাজের টাকা চাইতে গেলে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার টাকা না দিয়ে উল্টে হুমকি দিচ্ছেন, এমন কথাও বাড়িতে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুজোর আগে বাড়ি আর ফেরা হল না হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিক বংশীলাল মণ্ডলের (২০)। যে দিন রওনা হওয়ার কথা, তার এক দিন আগেই হরিয়ানার কাটলা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হল তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ। বাড়িতে ১০ মাসের ছেলে, পুজোর মুখে বাড়ি ফিরতে উদ্বিগ্ন যে ছেলে, সে আত্মহত্যা করেছে বলে মানতে রাজি নন পরিজনেরা। বাড়ি ফিরতে চাওয়ায় টাকা না দিয়ে তাঁকে খুন করে রেল লাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন পরিজনেরা।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের শামুখা এলাকায় বাড়ি বংশীলালের। পাঁচ বছর ধরে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। বছর দেড়েক আগে বিয়েও করেন। লকডাউনে গুজরাত থেকে বাড়ি ফিরলেও সংসারের কথা ভেবে ফের হরিয়ানায় কাজে যান বংশী। বিহারের বারসই এলাকার এক শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার তাঁকে হরিয়ানায় নিয়ে যান। সেখানে কাঠ চেরাই মিলে কাজ করতেন। মাস তিনেক কাজ করে কিছু টাকা জমায় পুজোর আগে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। শনিবার তিনি ট্রেনে উঠবেন জানালেও আগের সন্ধেতেই হরিয়ানা থেকে এক জন ফোন করে তাঁর মৃত্যুর কথা জানায়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট বংশী। বাকি দুই দাদাও ভিন্ রাজ্যে শ্রমিক। বাড়িতে রয়েছেন বাবা মহাবীর ও মা হিরা, স্ত্রী টুকটুকি ও ১০ মাসের শিশুসন্তান। বাবা মহাবীর বলেন, ‘‘নিজের স্ত্রী, ছেলের কথা ভেবে যে ছেলে বাড়ি ফিরতে উদ্গ্রীব ছিল সে আত্মহত্যা করতে পারে না। ওর প্রাপ্য টাকা না দিয়ে উল্টে হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছিল।’’
মালিওর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান সেতারা বিবি বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। পরিবারটিকে কী ভাবে সাহায্য করা যায় তা দেখছি।’’
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘পরিবারের লোকেরা এসে আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। এটা ভিন্ রাজ্যের ঘটনা। আমাদের তরফে যেটুকু করার তা করা হবে।’’