অনীত থাপা। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এ বার জেলা সদর, মহকুমা সদর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও বুথ স্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। বুধবার দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে তিন দিনের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্না কর্মসূচি শেষ হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক এবং কার্শিয়াঙে ধর্নার পরে সন্ধ্যায় দলের সভাপতি তথা ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান অনীত থাপা নতুন আন্দোলনের ঘোষণা করলেন। তিনি জানান, আগামী সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি অবধি পাহাড়ের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধর্না, র্যালি হবে। দলের তরফে কর্মসূচির নামকরণ করা হয়েছে, ‘মিশন জনজাগরণ’।
প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষকে গত ১৫ বছরের বঞ্চনা, ধোঁকাবাজির বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। মানুষ জেগেছেন। মিশন জনজাগরণ দিয়ে আরও মানুষকে আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে সচেতন করব। শহরের পরে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে
কর্মসূচি চলবে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, দার্জিলিঙে ১১২টি এবং কালিম্পঙের ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সোমবার সকাল থেকে ধর্না দিয়েই আন্দোলন শুরু হবে। পাহাড়ের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার দখলে থাকায় প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যদের সবাইকে কর্মসূচিতে কর্মীদের নিয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। আর এলাকার ‘জিটিএ’ সদস্যেরা ঘুরিয়েফিরিয়ে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মসূচিতে থাকবেন। টানা পাঁচ দিন এলাকায় বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১১ জনজাতির তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি না পাওয়া, পাহাড়-সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্যোগী না হওয়ার অভিযোগে সরব হওয়া থেকে শুরু করে পাহাড়ের জন্য বিজেপি ‘কিছু করেনি’ বলে প্রচার করতে বলা হয়েছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আন্দোলন শেষ হলে, তার পরের সোমবার থেকে বুথস্তরে একই কর্মসূচি শুরু হবে বলে প্রতিটি এলাকার দলীয় নেতা-নেত্রীদের বুধবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জানান, বুধবারও দলের বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়িয়ে তা গ্রাম পঞ্চায়েত, পাহাড়ের অলিগলিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বিজেপির বিরুদ্ধে লোকসভার প্রচার শুরু তো হচ্ছেই, সে সঙ্গে ভোটের আগে বুথ স্তরে সংগঠনের লোকজনকে একত্রিত করার কাজ চলবে। তাতে ভোট ঘোষণা হতেই নেতৃত্ব তৈরি সংগঠন নিয়ে পাহাড়ে নেমে পড়তে পারবেন।
বিজেপির পাহাড়ের কমিটির তরফেও প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার আন্দোলন, কর্মসূচির খবর নিয়মিত কলকাতা, দিল্লিতে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। দল সূত্রের দাবি, কী ভাবে এই লাগাতার কর্মসূচির মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে ‘চিন্তিত’ বিজেপি শিবির। দলের সাংসদ রাজু বিস্তাও নিয়মিত পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছেন। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনও ঘোষণা পাহাড়ে এ বার কতটা চিঁড়ে আদৌ ভেজাতে পারবে তা নিয়ে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, সরকারি বা সংসদের শিলমোহর ছাড়া, কোনও ঘোষণা আদতে গত ১৫ বছরের মতো ‘ফাঁকা’ ঘোষণা হবে বলে পাহাড়ে পাল্টা প্রচারও রয়েছে। সাংসদ অবশ্য বলেছেন, ‘‘মানুষকে দুর্নীতি, অনুন্নয়ন থেকে মুখ ঘোরাতে কলকাতার নির্দেশে পাহাড়ে এ সব চলছে। পাহাড়বাসী সঠিক
সিদ্ধান্তই নেবেন।’’