ফেরা: উপাচার্যের বাসভবন থেকে বেরোচ্ছে সিবিআই দল। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গের পরে, উত্তরবঙ্গে ‘নিয়োগ-দুর্নীতি’ নিয়ে তদন্তে নেমে পড়ল সিবিআই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে জেরা করে ‘এসএসসি-দুর্নীতির’ তদন্তে নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও খোঁজখবরে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে উত্তরে তদন্ত শুরু করে, পরের ধাপেই সিবিআই প্রাথমিকে নিয়োগের তদন্তে নামবে। আপাতত কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বিশেষ গোয়েন্দাদের দল প্রাথমিকে নিয়োগের নথিপত্র যাচাই করছে। তাদের হাতে উত্তরবঙ্গের কিছু তথ্য এসেছে। শিলিগুড়ি বা উত্তরবঙ্গে আসা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দল তাঁদের এ কাজে সাহায্য করছে। ইতিমধ্যে, বেশ কিছু নাম নিয়ে তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশেষ করে, সুপারিশ এবং বেআইনি নিয়োগের কেন্দ্রবিন্দুতে উত্তরবঙ্গে কারা রয়েছেন, তা সামনে এনে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে পারে সিবিআই।
তদন্তকারী সংস্থার ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার বলেন, ‘‘কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গের পরে এ বার উত্তরবঙ্গে নজর দেওয়া হচ্ছে। শুধু এসএসসি নয়, প্রাথমিক নিয়োগেও এখানে দুর্নীতি রয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। নিয়োগ, বদলি, টাকার লেনদেন রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ইডি-র হাতেও তথ্য রয়েছে। সব ধাপে ধাপে দেখা হচ্ছে।’’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০১৪-’১৮ সাল অবধি এসএসসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য। সে সময় বাগ কমিটির রিপোর্টে ৩৮১টি নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি-র দুই উপদেষ্টার গ্রেফতারের পরে, তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে অভিযান চালানোর নির্দেশ আসে। এর আগে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বহু তথ্য জোগাড় করে কলকাতা পাঠিয়েছেন। একই ভাবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও স্থানীয় স্তরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা শেষ হলে কলকাতা থেকে নির্দেশ এলে, এখানকার দল ময়দানে নামতে পারে। অথবা কলকাতা থেকে আলাদা দল উত্তরবঙ্গে আসতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
২০১৬ সালে শিক্ষামন্ত্রী হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় তিনি উত্তরবঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তখন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়। তাতে এক দলকে সুপারিশের ভিত্তিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। যোগ্যদের সেখানে কী ভাবে বঞ্চিত করা হয়, তা নথি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তেমনই, ‘আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে’ নিয়োগ, বদলির দেদার ‘কারবার’ চলেছে বলে সিবিআই অফিসারেরা মনে করছেন।
প্রতিটি জেলার শাসক দলের ‘ঘনিষ্ঠ’, নেতা-কর্মীদের আত্মীয়দের চাকরি হয় বলে অভিযোগ। সে সঙ্গে টাকার বিনিময়ে প্রাথমিকে বেশ কিছু চাকরির ব্যবস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার এই শ্রেণির তালিকা তৈরি করেই বিভিন্ন তথ্য যাচাই এ বার শুরু হয়েছে।