বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভাল। নিজস্ব চিত্র
পাহাড়, সমতলের ছোট্ট গ্রামীণ জনপদের পর্যটন এলাকাগুলিকে বেশি করে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরারই প্রয়াস এ বারের বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভালে। গত ২৭ জানুয়ারি দার্জিলিঙের বিজনবাড়ির পরে রবিবার অনুষ্ঠান হল ডুয়ার্সের জঙ্গল এবং চা-বাগানে ঘেরা লাটাগুড়িতে৷ আজ, সোমবার কার্নিভাল শেষ হবে পাহাড়ের চুইখিমে। রাজ্য পর্যটন দফতর এবং হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে এ বার কার্নিভাল তৃতীয় বছরে পা দিল। এ বারের থিম— বেঙ্গল রুরাল ট্যুরিজ়ম।
উদ্যোক্তারা জানান, পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সে এখন বহু নতুন এবং অজানা গন্তব্য সামনে উঠে আসছে। সুন্দর জায়গা, নিরিবিলি গ্রামীণ প্রকৃতি ছাড়াও পরিষেবার দিক থেকেও এগুলি উঠে আসছে। সেগুলিকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সামনে তুলে ধরাই এ বারের কার্নিভালের লক্ষ্য। তাই পাহাড়ের প্রধান প্রধান গন্তব্যস্থলের পাশাপাশি পাহাড়-জঙ্গল-সমতলের নানা নতুন এলাকাকে তুলে ধরা হচ্ছে।
রাজ্য পর্যটন দফতরের এক যুগ্ম সচিব বলেন, ‘‘বিজনবাড়ি, চুইখিম বা ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা নতুন ভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে। তাদেরই কার্নিভালে তুলে ধরা হয়েছে। এই সমস্ত এলাকা তথাকথিত গন্তব্যের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে।’’ তিনি জানান, নতুন চিন্তাভাবনায় হোম-স্টে, রিসর্ট হচ্ছে গ্রামীণ পাহাড় বা ডুয়ার্সের নতুন এলাকায়। মানুষজন সেখানে যাচ্ছেন। এতে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটছে। সিকিমে বহু এলাকা এ ভাবেই জনপ্রিয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিজনবাড়িতে কার্নিভালে পরীক্ষামূলক প্যারাগ্লাইডিং হয়েছে। ছিল ল্যান্ডরোভার র্যালিও। পাহাড়কে প্রকৃতির সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে মেলে ধরা হয়েছিল। সেখানে ডুয়ার্সের মালবাজার থেকে লাটাগুড়ি সাইকেল র্যালি, চালসা থেকে বাতাবাড়ি অবধি ডুয়ার্স মিনি ম্যারাথন হয়েছে। ক্রান্তি মোড় থেকে লাটাগুড়ি হাই স্কুল মাঠ অবধি র্যালি হয়। ছিল মেচ, ভাটিয়ালি, তিস্তাবুড়ির গান-সহ নানা আয়োজন। আজ, সোমবার চুইখিমে নেচার ওয়াক, বিভিন্ন খাবার, সংস্কৃতি নিয়ে আয়োজন থাকছে। চুইখিম ভিলেজ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি কার্নিভালে কাজ করছে। কার্নিভালের সঙ্গে যুক্ত লাটাগুলি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও। সব মিলিয়ে এলাকার প্রকৃতি, পর্যটন, পর্যটন সম্পর্কিত কাজ, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস এই আয়োজনে রয়েছে।
২০২০ সালে করোনো সংক্রমণের জেরে সব চেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছিল উত্তরের পর্যটন শিল্প। প্রথম দিকে দিনে ২৫ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ধীরে ধীরে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, রিসর্ট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। টানা এক বছরের লড়াইয়ে অনেকেই পেশায় টিকে থাকতেও পারেননি। ২০২১ সালেও পরিস্থিতির খুব বদল হয়নি। ২০২২ সাল থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তখন পর্যটনে শহরের চেয়ে গ্রামীণ এলাকা সাড়া বেশি পেয়েছে। পর্যটন সংগঠনের কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পর্যটন বিকাশের থিমেই কার্নিভাল হয়। এ বার লক্ষ্য গ্রামীণ পর্যটন।’’