রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর পরে রাজ্যপাল। মঙ্গল ও বুধবার পর পর দু’দিনে উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ও সাংবিধানিক প্রধান। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি থেকে বাগডোগরা যাওয়ার পথে মমতার কপ্টার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তড়িঘড়ি সেবকে অবতরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেখানেই হেলিকপ্টার থেকে নামার সময় মুখ্যমন্ত্রী জখম হন। বুধবার তেমনই দুর্যোগের আশঙ্কায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিয়ে আকাশে উড়লই না হেলিকপ্টার। বাতিল হল রাজ্যপালের কোচবিহার সফর।
বুধবার সকাল থেকেই বৃষ্টি চলছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। আকাশও মেঘলা। এমন আবহাওয়ার কারণে কোচবিহার সফর বাতিল হয় রাজ্যপাল বোসের। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে অশান্ত কোচবিহারে রাজ্যপালের সফর ঘিরে নানা রাজনৈতিক জল্পনা ছিলই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের মতো কোচবিহারের দিনহাটায় রাজ্যপাল আসবেন কি না, এ নিয়ে চর্চা শুরু হয় তৃণমূল এবং বিজেপির অন্দরে। তৃণমূল নেতৃত্ব চেয়েছিলেন দিনহাটায় তাদের মৃত কর্মীর বাড়িতে আসুন রাজ্যপাল। নিজে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখুন। অন্য দিকে, বিজেপির পরিকল্পনা ছিল তাদের প্রতিনিধিরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে বেশ কিছু অভাব-অভিযোগ জানাবেন। কিন্তু রাজ্যপাল বোসের সফর বাতিল হওয়ায় এ বার সেটা হচ্ছে না।
প্রথমে ঠিক ছিল শিলিগুড়ি গেস্ট হাউস থেকে দুপুর ৩টে নাগাদ বাগডোগরা বিমানবন্দরে যাবেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে করে কোচবিহার যাবেন। উঠবেন কোচবিহারের সার্কিট হাউসে। সূচি অনুযায়ী, বুধবার বিকেলে কোনও কর্মসূচি ছিল না রাজ্যপালের। ওই সময় তিনি দিনহাটার উপদ্রুত এলাকায় যাবেন কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। তবে আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার সফরের ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। ঠিক হয় সড়কপথেই কোচবিহার যাবেন রাজ্যপাল। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও পরে বাতিল হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পরে শিলিগুড়ি গেস্ট হাউসে ফিরে গিয়েছেন রাজ্যপাল। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ি থেকে মুর্শিদাবাদ যাবেন রাজ্যপাল। আগের সূচি অনুযায়ী, কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে বহরমপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হওয়ায় শিলিগুড়ি থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে আবার দার্জিলিং যাবেন রাজ্যপাল। কিন্তু আবহাওয়া যদি এমন থাকে, সে ক্ষেত্রে রাজ্যপালের মুর্শিদাবাদ সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কী করবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর বাংলার যে কয়েকটি জায়গায় রাজনৈতিক উত্তেজনা উত্তরোত্তর বেড়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম কোচবিহারের দিনহাটা। মঙ্গলবারই এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। গুলি এবং বোমাবাজিতে আতঙ্কিত দিনহাটার গীতালদহের বাসিন্দারা। এর মধ্যে কোচবিহারের শীতলখুচিতে তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট চলাকালীন যে শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে বেশ কয়েক জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, বুধবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার নিয়ে অশান্তি হয়। শীতলখুচির ডাকঘরা এলাকায় তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে গুলিও চলেছে। এ সবের মধ্যেই রাজ্যপালকে জেলায় পাওয়ার আশায় ছিল জেলার রাজনৈতিক মহল। কিন্তু সে আশা পূর্ণ হল না।