গীতালদহে পুলিশ এবং বিএসএফ একত্রে এলাকা পরিদর্শন করছে। —নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহার মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জায়গা দিনহাটার গীতালদহ। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ধরলা নদী বিচ্ছিন্ন করেছে দড়িবস এবং জারি ধরলা নামে দুটি গ্রামকে। নদী পার করে কিছুটা এগোলে সামনেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। স্থানীয়রা বলেন, ‘‘চোরাচালান কারবারিদের জন্য স্বর্গরাজ্য ধরলা।’’ কারণ, নদীবেষ্টিত গ্রামে কাঁটাতার দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিএসএফের চোখ এড়িয়ে সেখানে দুষ্কর্ম চলে। গ্রামে দুটো বুথ রয়েছে। তার ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫০০। সেই গ্রামই গত ২৪ ঘণ্টায় আতঙ্কে রয়েছে। বোমাবাজি, গুলি চলায় মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল গীতালদহের জারি ধরলা গ্রাম। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর পর ছয় জন গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং এক জনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য এলাকায়। তুঙ্গে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। এর মধ্যে ভোট না মেটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় নতুন পুলিশ ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিল কোচবিহার জেলা পুলিশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য গ্রামে টহল দিচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি সীমান্ত পার করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা যাতে এ রাজ্যে না ঢুকে পড়ে তার জন্য বিএসএফ-এর সঙ্গে আলোচনা করেছে জেলা পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং নতুন করে কোনও অশান্তি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে কথা মাথায় রেখে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত ওই পুলিশ ক্যাম্প বসানো হচ্ছে।’’
গুলি এবং বোমাবাজির ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলেই অবশ্য জারি ধরলায় পুলিশ ক্যাম্প বসে। তাতে স্থানীয়েরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও আতঙ্কের পরিবেশ ছিল। এখন গুলিবিদ্ধদের শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল বলে খবর। তবে এক জনের শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে শিলিগুড়ির হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
সিতাই কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার কথায়, ‘‘গতকালের (মঙ্গলবার) ঘটনার পর থেকে এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ক্যাম্প বসিয়েছে। সেই কারণে সাধারণ মানুষ কিছুটা নিরাপদ বোধ করছেন। আর যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাদের অবস্থাও অনেকটা স্থিতিশীল। তবে এক জন শিলিগুড়ির বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অপারেশন হয়েছে।’’ মঙ্গলবারের ঘটনার পর শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল বিজেপি শাসিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বুধবারও তারা সেই অভিযোগ থেকে সরেনি। তবে বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘জারি ধরলার ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। চোরাচালানকারী এবং মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ রয়েছে। টাকাপয়সার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটেছে।’’ বিজেপি নেতার দাবি, ওই এলাকায় তাদের সংগঠন তেমন শক্ত নয়। দু’এক জন বিজেপিতে যোগদান করেছে ঠিকই। কিন্তু অশান্তি করার কোনও প্রশ্নই নেই। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার যা হয়েছে তা তৃণমূলের এবং চোরাচালানকারীদের মধ্যে হয়েছে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভোট।’’