অশোক ভট্টাচার্য
দীর্ঘ প্রায় চার দশক পর সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির সদস্যপদ থেকে সরানো হল অশোক ভট্টাচার্যকে। তিনি দীর্ঘদিন রাজ্যের পুরমন্ত্রী, বিধায়ক, শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। দলীয় সূত্রের খবর, বয়ঃসীমা সংক্রান্ত নিয়মের কারণেই জেলা কমিটির সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অশোককে কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে।
দলের এমন সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েও অশোক ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ এবং ‘বেদনাদায়ক’ বলে জানিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রত্না ভট্টাচার্য সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। এর মধ্যে দলের জেলা কমিটির সদস্য পদও চলে যাওয়ায় তিনি একরকম ‘একা’ হয়েছে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘খারাপ লাগছে। ঠিক আছে। দলের নিয়ম। কী করা যাবে! শিলিগুড়িতে দল তৈরিতে সব সময় কাজ করেছি। দলকে আরও কিছুদিন সময় দিতে পারলে ভাল হত। এতদিন বিরোধীদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছি। বয়স কোনও সময় বাধা হয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চার দশক আগে আমার বিয়ের বছরই প্রথম জেলা কমিটির সদস্য হয়েছিলাম। রত্না চলে গেল, আমিও জেলা কমিটিতে থেকে বাদ পড়লাম। অদ্ভুত লাগছে! কী করা যাবে! সময়ের সঙ্গে সবই চলবে।’’
গত শনিবার থেকে শিলিগুড়িতে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের জেলা সম্মেলন হয়েছে। সেখানে জীবেশ সরকারকে সরিয়ে নবনির্বাচিত জেলা সম্পাদক হয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক। তিনি দার্জিলিং জেলা সিটুর সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। সিটুর সম্মেলন হলে সেই পদ ছেড়ে দেবেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হযেছে। জীবেশ অবশ্য জেলা কমিটিতে আছেন। একের পর এক বামেদের পরাজয়ে দলে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার দাবি তুলছেন একাংশ। সেজন্য এসএফআই, ডিওয়াইএফআই থেকে আসা নেতাদেরও জেলা কমিটির পদে আনা হয়েছে।
দলের একাংশের দাবি, শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্যকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন দল লড়াই করেছে। ২০১১ সালের বিধানসভা ছাড়া তৃণমূল বাকি কোনও ভোটেই জিততে পারেনি। তৃণমূলের জমানাতেও পুরসভা, বিধানসভা, মহকুমা পরিষদ বামেরা জিতেছে। এ বার ভোটে বিধানসভায় হারেন অশোক। জিতেছে বিজেপি। ভোটের প্রচারে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও অশোক ভট্টাচার্যের নাম নিয়ে লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে অশোক কিছুটা অভিমানের কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি পুরভোটে আর লড়তে চান না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। তবে দলের চাপে শেষ অবধি তিনি কী করবেন তা সময়ই বলবে।
সিপিএমের সদ্যপ্রাক্তন জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার জানান, নতুন নিয়মে জেলা কমিটির ক্ষেত্রে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের জেলা কমিটির সদস্য রাখা হবে না। তিনি বলেন, ‘‘অশোক ভট্টাচার্য এবং আরও তিন জনের বয়স ৭০ বছরের বেশি হওয়ায় পদ থেকে সরিয়েছে দল। তাঁদেরকে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে।’’
সদ্য নির্বাচিত দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘পুরনোদের পরামর্শে নতুনদের সামনে রেখেই আগামী দিনে দল লড়বে।’’