বিমল গুরুং। ফাইল চিত্র।
মোর্চার দুই গোষ্ঠীর টানাপড়েন বেড়েই চলেছে। তাকভরে বিনয়পন্থী মোর্চার এক যুবক এর মধ্যে ছুরির হামলায় জখমও হয়েছেন। তার পরে নবান্নের সঙ্গে কথা বলেছেন অনীত থাপা। এ দিন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি অনীত ফের বার্তা দিলেন, ‘‘অস্ত্র নিয়ে পাহাড়ে কেউ খেলবেন না। অস্ত্রের রাজনীতি পাহাড়ে চলবে না। নেতাদের গোলমালে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ মানুষ। তাঁরা শান্তি চান। আমরা অনেক কষ্ট করে তিন বছরে একটা জায়গা তৈরি করেছি। তা নষ্ট হতে দেব না।’’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘পাল্টা প্রতিরোধ, প্রতিশোধ আমরাও করতে পারি। তাতে অনেকেরই বড় রকমের সমস্যা হতে পারে।’’
যাঁদের উদ্দেশ করে এই কথাগুলো বলা বলে মনে করছেন পাহাড়ের পর্যবেক্ষকরা, সেই বিমল গুরুং গোষ্ঠীও বসে নেই। এ দিন কলকাতার একটি হোটেলে কার্শিয়াং থেকে তিন বছর ঘরছাড়া একাধিক নেতানেত্রী নিজেরা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার কথা বলেছেন।
এদিন সকাল থেকে জজবাজারে দফায় দফায় কর্মীদের নিয়ে বসেন বিনয় তামাং। দলীয় সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দেওয়ালির পরেই পাহাড়ে দলের সমস্ত কমিটি নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। তেমনিই, শান্তি, উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং পর্যটনের স্বার্থে দার্জিলিং শহরে বড়মাপের জনসভা করা হবে। ১৭টি ব্লক কমিটিকে আলাদা করে গুরুংপন্থীদের কাজকর্মের উপর নজর রাখতেও বলা হয়েছে। তবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে।
বিনয় বলেছেন, ‘‘গুরুং পাহাড়ে না আসতেই এই অবস্থা। এলে কী হবে, তা সবাইকে ভাবতে হবে! আর পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা শুধু বিনয়, অনীতের দায়িত্ব নয়। সব রাজনৈতিক দলকেই এটা মাথায় রাখতে হবে।’’ তিনি কি তৃণমূলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন? এর কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি বিনয়। তবে তিনি বলেন, ‘‘বিমলের অবস্থা আপ্পার মতো হবে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওঁকে পাহাড়ে আসতে হবে। আমরা যতক্ষণ পতাকা ধরে রয়েছি, বিমলের পাহাড়ে কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’
পাহাড়ের রাজনীতিতে সুবাস ঘিসিং ‘আপ্পা’ নামে পরিচিত। বিমলের উত্থানের ঠেলায় তিনি একসময় পাহাড়ে আসতেই পারেননি। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতে থাকতেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেহ পাহাড়ে নিয়ে যেতে পারেননি। পরে রাজ্যের সঙ্গে জিএনএলএফের বোঝাপড়ায় পরিস্থিতি বদল হলেও ঘিসিং আর সে ভাবে পাহাড়ে থেকে রাজনীতি করতে পারেননি। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, বিমলকেও কলকাতা বা শিলিগুড়িতে থেকে যেতে হবে— এই কথাই বোঝাতে চেয়েছেন বিনয়। এই অবস্থায় পুলিশ-প্রশাসনের উপরও চাপ বাড়ছে। পাহাড়ের দুই জেলায় রোজই দুই তরফে ছোট হলে মিটিং, ঘরোয়া জমায়েত চলছে। তার থেকে এলাকায় যাতে অশান্তি না ছড়ায় তা স্থানীয় থানাগুলি টানা নজরদারি রেখে দেখতে বলা হয়েছে।