ফাইল চিত্র।
সরকারি খাস জমি ‘দখল’ করেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠেছে বলে প্রশাসনের তরফে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর একটি অট্টালিকাসম বাড়ি রয়েছে লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে। সেটিও সরকারি লিজ়ের জমিতে। বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের পর বুধবার বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের টেবিলে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্ট বলছে, বানারহাটের চামুর্চি মোড়ে ‘বার্লা কমপ্লেক্স’ নামে যে বাণিজ্যিক ভবনটি গড়ে উঠেছে, সেটি সরকারি খাস জমির উপরে তৈরি হয়েছে। এক সময়ে জমিটি পূর্ত দফতরের হাতে ছিল। সার্ক রোড তৈরির জন্য পূর্ত দফতর বছরখানেক আগে জমিটি হস্তান্তর করেছে। সেই সুবাদে এখনও জমিটি সরকারি দখলেই রয়েছে। লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে জন বার্লার প্রাসাদোপম বাড়ি নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই বাড়ির জমিটিও সরকারি লিজ়ে থাকা জমি বলে প্রশাসন প্রাথমিক রিপোর্টে জানতে পেরেছে। নিয়ম অনুযায়ী, চা বাগানের লিজ়ে থাকা জমিতে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে বাড়ি তৈরি করতে পারেন না।
জলপাইগুড়ির জেলাশসাক মৌমিতা গোদারা বলেন, ‘‘চামুর্চি মোড়ের বাণিজ্যিক ভবনটি পূর্ত দফতরের জমি দখল করে হয়েছে। পূর্ত দফতরকে এই রিপোর্ট জানিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হবে। লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের সরকারি লিজ়ের জমিতে বাড়ি তৈরি হল কী ভাবে তা জানতে চেয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের মালিককে শোকজ করা হচ্ছে।
বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলার প্রাক্তন সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেই জন বার্লার বাড়ি এবং বাণিজ্যিক ভবন নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। সাংসদ নিজের প্রভাব কাটিয়ে সরকারি জমি দখল করে বাড়ি-বাণিজ্যিক ভবন বানিয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল গঙ্গাপ্রসাদের। তাঁর বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগের কিছুদিন পরেই জন বার্লা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের তরফে জেলাশাসকের দফতরে জন বার্লার বিরুদ্ধে জমি দখলের দু’টি অভিযোগ দাখিল করে। একটি চা বাগানের জমি দখল করে বাড়ি এবং অন্যটি পূর্ত দফতরের জমি দখল করে বাণিজ্যিক ভবন তৈরি। প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্তে দু’টি অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে বলে দাবি। জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “সাংসদ বলে নিশ্চই তিনি বিশেষ সুবিধে পাবেন না। আশা করব, দুটি অবৈধ ভবন শীঘ্রই ভেঙে ফেলা হবে এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ দায়ের হবে।”
এ দিকে, গত মঙ্গলবারই বানারহাটের বিতর্কিত ‘বার্লা কমপ্লেক্সে’ জন বার্লার চা শ্রমিক সংগঠনের অফিসের উদ্বোধন হয়েছে। জমি দখলের অভিযোগকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার জন্যই সেই অফিস খোলা হয়েছে কিনা তা নিয়ে চর্চা চলছে। এ দিন জন বার্লার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্যদিকে, বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা আহ্বায়ক ভূষণ মোদক বলেন, “প্রশাসনের রিপোর্ট আমরা দেখিনি। তবে প্রশাসন যে তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে, সেটা রাজ্যের নিরপেক্ষ বাসিন্দাদের কাছে স্পষ্ট।”