নবান্ন।
শহরের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য সেই ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। অভিযোগ, সেই বরাদ্দের অর্ধেকও খরচ করে উঠতে পারেনি আলিপুরদুয়ার পুরসভা। এই অবস্থায় চলতি মাসেই বাকি ৯২ লক্ষ টাকা খরচ করতে পুরসভাকে সময় বেঁধে দিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা।
পুরভোটের মুখে এই নির্দেশে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। চলতি মাসে আর পড়ে আছে ২২ দিন। এর মধ্যে এত টাকা কীভাবে খরচ হবে, তা নিয়েই ফাঁপড়ে পুরকর্তাদের একাংশ। তাদের সঙ্গে বিরোধীদের এ নিয়ে বাগ্যুদ্ধও শুরু হয়ে গিয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে একটি ডিপিআর তৈরি করে পুরসভা। যাতে বাড়িতে বাড়িতে ৪ হাজার ৭০০টি শৌচাগার, ৮০টি কমিউনিটি টয়লেট ও ২০টি পাবলিক টয়লেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ডিপিআর অনুমোদন করে রাজ্যের তরফে বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগারের জন্য ৩ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা, কমিউনিটি টয়লেটের জন্য ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ও পাবলিক টয়লেটের জন্য ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
কিন্তু পুরকর্তাদের একাংশের দাবি, পরবর্তীকালে আবেদনকারীদের অনেকে ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পের মধ্যেই শৌচাগার পেয়ে যান। ফলে এই খাতে শৌচাগার নিতে তাঁরা অস্বীকার করেন। একই ভাবে বেশ কিছু জায়গায় কমিউনিটি টয়লেট তৈরিতে অনেকে আপত্তি জানান। এর ফলে ফের সমীক্ষা করে পুরকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, আলিপুরদুয়ার শহরে বাড়িতে বাড়িতে ২ হাজার ২৫০টি শৌচাগার তৈরি করা হবে। কমিউনিটি টয়লেট তৈরি হবে ৪৫টি। এই অবস্থায় গত বছর জুন মাসে বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগারের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে ২ কোটি ২ লক্ষ টাকা ও কমিউনিটি টয়লেটের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা সরকারকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় পুরসভা।
কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রে পড়ে থাকা ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার মধ্যে গত তিন বছরে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৭ লক্ষ টাকা। পড়ে আছে ৯২ লক্ষ টাকা। কমিউনিটি টয়লেটের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। এই খাতে ফেরত পাঠানোর পর পড়ে থাকা বাকি ২ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৬২ লক্ষ টাকা।
পুরসভা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কলকাতায় বিভিন্ন পুরসভার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা। সেখানে আলিপুরদুয়ারের পুরকর্তারাও ছিলেন। এই বৈঠকেই শৌচাগার তৈরির বাকি অর্থ চলতি মাসের মধ্যে খরচ করতে পুরকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই নির্দেশ ঘিরে পুরভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধীদের কাজিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সিপিএম নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনিন্দ্য ভৌমিকের অভিযোগ, টাকা বরাদ্দের শুরুতেই ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ড শৌচাগার তৈরির কাজ নিয়ে টালবাহানা করেছিল। সেজন্যই তিন বছরেও বহু মানুষ শৌচাগার পাননি। তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার আরেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশিস দত্ত পাল্টা বলেন, ‘‘সিপিএম নেতারা না জেনেই এসব মন্তব্য করছেন। টাকা বরাদ্দের পর আমাদের বোর্ড অনেক বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করেছিল। কিন্তু অনেকে শৌচাগার নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।’’ পুরসভার প্রশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘শৌচাগার তৈরির কাজ চলছে। সময়েই তা শেষ হবে।’’