প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে ঝামেলায় জ্ঞান হারালেন এক তৃণমূল কর্মী। তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন কয়েক জন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী বাছাই অভিযান ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল অব্যাহত। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় মারামারি, ধাক্কাধাক্কিতে জড়ালেন তৃণমূল নেতা এবং কর্মীরা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তাঁরা। নিজেরাই বলছেন গোষ্ঠীকোন্দলের কথা। ঘটনাস্থল কোচবিহারের মাথাভাঙা।
মঙ্গলবার দুপুরে মাথাভাঙায় সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর শুরু হয় প্রার্থী বাছাই অভিযান। নিজেদের প্রার্থী নিজেরা বাছতে গিয়ে শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলা। হাতাহাতি, মারামারি চলে রাত পর্যন্ত। মাথাভাঙা কলেজ গ্রাউন্ড ক্যাম্পে গোপন ব্যালটের ভোটে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায় রাতেও। তৃণমূল নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে ভোট না দিতে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ করা হয় ব্যালট বাক্স আটকে রাখার। দেখা যায় ব্যালট বাক্সের পাশেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। তাঁর মাথায় জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাচ্ছেন কয়েক জন। তার মধ্যেও গন্ডগোল অব্যাহত। পরে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। কারণ, ব্যালট বাক্সও ভেঙে ফেলা হয়।
সোমবার থেকে অভিষেকের ৬০ দিনের কর্মসূচি সাজিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছে কোচবিহার থেকে। ‘জনসংযোগ যাত্রা’র শুরুতে অভিষেক জানান, তিনি ভাল মানুষের খোঁজে পথে নামছেন। সন্ত্রাসবিহীন ভোট করতে হলে চাই ‘ভাল প্রার্থী’। মানুষকেই নেতা বেছে নেওয়ার ভার দিচ্ছেন তাঁরা। মানুষের মত জানার পরই পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে তৃণমূল। এমন একটি কর্মসূচি সারা ভারতে অভিনব বলে দাবি করেন অভিষেক। কিন্তু সেই কর্মসূচি শুরুর দিনেই কোচবিহারের নানা জায়গায় ঝামেলা দেখা যায়। অভিষেকের সভার পর প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়া মাত্রই ঝামেলা বাধে সাহেবগঞ্জ, সিতাই গোঁসানিমারি এবং মাথাভাঙায়। মারামারি, ঝগড়ায় উত্তেজনা চরমে ওঠে।
অভিষেক অবশ্য জানান, অত্যুৎসাহীরা ভোট দিতে গিয়েই ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলছেন। তবে নেতাদের উদ্দেশে সতর্কবাণীও দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘‘যদি কেউ ভাবেন, গায়ের জোরে, ব্যালট বাক্স ভেঙে নিজেদের নাম ঢুকিয়ে প্রার্থী হবেন, তা হলে তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, পাহারাদারের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি এই কারণেই তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ শুরু করেছি।’’ তবে সেই সাবধানবাণী সত্ত্বেও রাতেও দেখা গেল বিশৃঙ্খলা।
অভিষেকের এই কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়,‘‘ভাইপো পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ব্যালট বাক্স নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ওঁর দলের লোকেরাই উল্টে দিয়েছে। এ থেকেই পরিষ্কার যে ওঁর দলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। তাহলে রাজ্যে কি করে গণতন্ত্র থাকবে?’’