প্রতীকী ছবি।
কাঁটাতারের ঘেরাটোপে একেই তাঁরা নিজভূমে পরবাসী। বিঁড়ি বেধেই চলে সংসার। কিন্তু কার্যত লকডাউনের মতো বিধিনিষেধে রোজগার তলানিতে ঠেকায় তাঁদের জীবন-যন্ত্রণা আরও চরমে। এ দিকে করোনা রুখতে জেলায় জোরদার টিকাকরণ কর্মসূচি চললেও কাঁটাতারের বেড়া টপকে টিকাকরণের ব্যবস্থাও তাঁদের হয়নি। করোনা পরীক্ষা তো দূরঅস্ত। মালদহে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা তিনটি গ্রাম দুই শত বিঘি, মহব্বতপুর ও হাদিনগরের চালচিত্র এখন
এমনই।
কালিয়াচক ৩ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা চরিঅনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই তিন গ্রাম। দেশের সুরক্ষায় ১৯৯৯ সালে সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া হলে এই তিনটি গ্রাম কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পড়ে যায়। একে একে বেশিরভাগ পরিবারই মূল ভূখণ্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। তবে এই তিনটি গ্রামে এখনও অন্তত ৮০টি পরিবার রয়ে গিয়েছেন। বিড়ি বেঁধেই মূলত সংসার চলে তাঁদের। কিছু পরিবারের সদস্যরা আবার কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। তিন গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের সময় মাত্র ৬ ঘণ্টা। সকাল ৬টা, বেলা ১০টা ও বিকেল সাড়ে তিনটে-এই তিন সময়ে দু'ঘণ্টা করে কাঁটাতারের বেড়ার গেট খোলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দেওয়া ‘গেট পাস’ সীমান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর গেটে জওয়ানদের কাছে জমা রেখে, রেজিস্টারে নাম নথিভুক্ত করে তবেই যাতায়াত।
অভিযোগ, পাচারের দোহাই দিয়ে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে বিড়ির পাতা-মশলা নিয়ে যেতে নিষেধ করেছে। তাই, সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে এ পারে এসে মহিলারা বিড়ি বাঁধছেন, আবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। এই সময়ে সামান্য সংখ্যক বিড়ি বাধায় রোজগার তলানিতে বলে জানাচ্ছেন ভারতী সিংহ, দেবীকা সিংহ, আদরী মণ্ডলরা। স্বাধীন সিংহ, ভক্তি মণ্ডল, রবিউল শেখদের মতো বাসিন্দাদের আক্ষেপ, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকায় সরকারি নানা পরিষেবা যেমন সহজে পৌঁছয় না, তেমনি করোনার টিকাও তাঁরা পাননি। এ নিয়ে পঞ্চায়েত, প্রশাসন বা স্বাস্থ্য দফতর সকলেই উদাসীন। তাঁদের প্রশ্ন, কাঁটাতারের বেড়া টপকে করোনা কি তাঁদের সংক্রমিত করবে না?
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ৩ সব্যসাচী চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন তালিকা দিলেই কাছাকাছি এলাকায় তাঁদের টিকাকরণের ব্যবস্থা হবে।’’ এখন প্রশ্ন, ঘণ্টাটা বাঁধবে কে?