—নিজস্ব চিত্র।
অনুষ্ঠান শেষ করে ফেরার সময় মাঝ রাস্তায় দুষ্কৃতীদের হামলার মুখে পড়ল রাজ্য পর্যটন দফতরের একটি সংস্থা। রবিরার রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে চতুর্থ বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভালের শেষ দিন ছিল। সেখান থেকে শিলিগুরি ফেরার পথে হামলার মুখোমুখি পড়ে বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভালের আয়োজক সংস্থা। জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় কিছু মানুষের মোবাইল এবং মানিব্যাগ ছিনতাই হয়েছে। পাশাপাশি, সাত জন আহত হয়েছে। এই মর্মে হিমালয়ান কার্নিভালের আয়োজক সংস্থা গাড়িধুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলার লাটাগুড়িতে বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভাল শুরু হয়। অনুষ্ঠানের সূচনার পর দ্বিতীয়ভাগে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় কালিম্পং জেলার জলঢাকায়। রবিবার ছিল তার শেষ দিন। মূলত পর্যটকদের মধ্যে হিমালয়কে কেন্দ্র করে পর্যটন ব্যবস্থা আরও পোক্ত করতেই দফতরের এই উদ্যোগ। রবিবার রাতে, দার্জিলিং জেলার মিরিকে অনুষ্ঠান শেষ করে শিলিগুড়ি ফিরছিলেন আয়োজক সংস্থা ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক’-এর সদস্যরা। সঙ্গে ছিলেন ভিন্রাজ্যের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অতিথিরাও। সংস্থার তরফ থেকে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি ফেরার সময় দু’টি গাড়ি মিলিয়ে প্রায় ২০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, মিরিক থেকে কিছুটা দূরে কার্শিয়ংয়ের কাছাকাছি সৌরিনী চা বাগানের কাছে বেপরোয়া ভাবে অন্য একটি গাড়ি তাঁদের পিছু নেয়। মদ্যপ অবস্থায় পাহাড় থেকে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন ওই গাড়িচালক। দুর্ঘটনা এড়াতে ওই গাড়িচালকটিকে সাবধানে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁদের গাড়িচালক। সেই থেকেই সমস্যার শুরু।
মত্ত গাড়িচালক তাঁদের সেখানেই হুমকি দিতে শুরু করেন। এর পর দুধিয়া সংলগ্ন এলাকায় সংস্থার গাড়ি গুলো পৌঁছতেই প্রায় জনা পঞ্চাশেক মানুষ তাঁদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে এলাকায়। ঘটনায় আয়োজক সংস্থার বেশ কয়েক জন আহত হন। হেনস্থার শিকার হতে হয় মহিলাদেরকেও। ঘটনা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। মারধোরের পাশাপাশি চলে লুটপাট। মোবাইল-সহ মানিব্যাগ খোয়া গিয়েছে অনেকের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতেই সংস্থার গাড়ি গুলো আশ্রয় নেয় গাড়িধুড়া থানায়। সেখানে ঘটনার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এই ঘটনায় ৭ জন আহত হন। এই হামলার পর উঠছে প্রশ্ন। যেখানে খোদ পর্যটন আয়োজক সংস্থা এমন বিপদের মুখে পড়ে, সেখানে তারা পর্যটকদের সুরক্ষিতভাবে ঘোরাবে কী করে?
ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্ক’-এর কোঅর্ডিনেটর তন্ময় গোস্বামী বলেন, “কার্নিভাল শেষ করে আমরা ফিরছিলাম। সৌরিনি চা বাগানের কাছে বেপরোয়া ভাবে চলতে থাকা অন্য একটি গাড়িকে সাবধান হতে বলেছিলেন আমাদের গাড়িচালক। সেখানেই ওই গাড়িচালক আমাদের হুমকি দেন। দুধিয়ার কাছে পৌঁছতেই তাঁরা লোকজন নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালান। বেশ কয়েক জন আহত হয়েছে। মহিলাদেরও হেনস্থার করেন তাঁরা। আমাদের সঙ্গে ভিন্রাজ্যের অতিথিরা রয়েছেন।” তন্ময় আরও বলেন, “যাঁরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন তাঁরা এলাকার সাধারন মানুষ নয়৷ তাঁরা দুষ্কৃতী।”
পর্যটকদের সুরক্ষার প্রশ্নে তন্ময়ের উত্তর, “এত বছরে আজকে এই প্রথম নিরাপদহীনিতায় খানিকটা রয়েছি। তবে, এটা সাময়িক। আমাদের সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রশাসন রয়েছে। আজকেও পুলিশের তৎপরতায় আমরা সেখান থেকে উদ্ধার পেয়েছি। সুতরাং এগুলো নিয়ে ভয় পেলে চলবে না। কাজ চলতে থাকবে।”
কার্নিভালে অংশগ্রহনকারী কলকাতার পর্যটন ব্যাবসায়ী গার্গী নাথ বলেন , “রাস্তায় আমাদের প্রচণ্ড হেনস্থার শিকার হতে হয়। এলাকার মানুষদের তাঁরা কি বুঝিয়েছেন আমরা জানি না৷ সকলে মিলে আমাদের উপর চড়াও হয়। আমরা যারা পর্যটনকে প্রচার করছি তাঁদের যদি এ ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় তাহলে পর্যটকেরা যাঁরা আমাদের ভরসায় আসবেন তাঁদের কী পরিণতি হবে?”