গরমে ভিড় বাড়ছে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের আনাচেকানাচে। —ফাইল চিত্র।
গরমের তীব্রতা যত বাড়ছে, ততই ভিড় বাড়ছে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের আনাচেকানাচে। পাহাড়ের তাপমাত্রা আগের থেকে বাড়লেও সমতলের থেকে আরামদায়ক হওয়ায় পাহাড়ের বড়, ছোট জনপদ জুড়ে ভিড়। পর্যটনের হিসাবে বলছে, আপাতত পাহাড়ের ৯০ শতাংশ হোটেল, হোম-স্টে ভর্তি। এর মধ্যে মে মাসে সর্বকালীন রেকর্ড সংখ্যক টিকিটও বিক্রি করে ফেলেছে টয় ট্রেন৷ সম্প্রতি পর্যটকদের মতই সপরিবারে দার্জিলিং ও কালিম্পং ঘুরে গিয়েছেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ব্যক্তিগত সফরে তিনি কোনও সরকারি কর্মসূচি না রাখলেও চুপচাপ ঘোরার সঙ্গে পর্যটন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প, ভিড়ের খোঁজখবর অফিসারদের থেকে নিয়েছেন।
আপাতত জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাহাড়ে উপচে পড়া ভিড় থাকছে। তবে গরমে সপ্তাহের শেষের এক-দু’দিন ছাড়া, অনেকটাই হালকা বা ভিড় শূন্য ডুয়ার্স। পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক বা কার্শিয়াঙের মতো শহরের পরে দার্জিলিঙের দাওয়াইপানি, তাকদা, লামাহাটা, কালিম্পঙের লাভা, রিশপ, কোলাখামে ভাল ভিড় রয়েছে। সে সঙ্গে সিকিমের পেলিং, রাবাংলা, গ্যাংটকেও পর্যটকেরা যাচ্ছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, ভিন্ রাজ্যের পর্যটকদেরও পাহাড়ে ভিড় রয়েছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে শনিবার-রবিবার অনেক স্থানীয় বাসিন্দা পাহাড়ে যাচ্ছেন। আবার শুধু সুইমিং পুল-সহ রিসর্ট খুঁজে, সপ্তাহের শেষে ছুটিতে ডুয়ার্সে ছুটছেন এলাকাবাসীর একাংশ।
পর্যটন দফতরের এক যুগ্ম সচিবের কথায়, ‘‘গত বছর জুন মাসে জোরদার বৃষ্টি নেমে পড়েছিল। পাহাড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর সিকিমের খুব খারাপ অবস্থা ছিল। এ বার পুরো উল্টো ছবি। সমতলে গরমে পুড়ছে। পাহাড়ে গরম বাড়লেও, তা অনেকটাই আরামদায়ক। আর দার্জিলিঙে তো দিনে-দিনে আবহাওয়ার বদল হচ্ছে।’’
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণের বাড়াবাড়ির পরে পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গত বছর থেকে পর্যটকদের ঘোরাঘুরি বাড়তে আরম্ভ করেছিল। এ বার কার্যত ভিড়়ে ঠাসা পাহাড়। তাতেই গত মে মাসে সর্বকালের রেকর্ড গড়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর) বা টয় ট্রেন। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, গত মে মাসে ৩০ হাজার ৩০৩ জন যাত্রী টয় ট্রেনে চড়েছেন। আর টিকিট বাবদ ৩.৫৭ কোটি টাকা ‘ডিএইচআর’ কর্তৃপক্ষ আয় করেছেন। গত বছর এই সময় টয়ট্রেনের আয় ৩.১৯ কোটি টাকা টপকে গিয়েছিল।
পর্যটকদের ভিড় যে বেড়েছে, পাহাড়ের হোটেল, হোম-স্টে বুকিং বা টয় ট্রেনের রেকর্ড টিকিট বিক্রিতেই শুধু তার সন্ধান মিলছে, এমন নয়। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কেও ভিড় বেড়েছে। সেখানে চলতি অর্থ বর্ষে বন দফতর প্রায় ৫.৬৫ কোটি টাকা আয় করেছে। গত বছর তা ছিল প্রায় ১.৭৬ কোটি টাকা। গত এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ মাস অবধি প্রায় দুই লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষ বেঙ্গল সাফারি পার্কে গিয়েছেন।
বন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, স্থানীয়েরা শুধু নন, দার্জিলিং-কালিম্পং বা সিকিম ফেরত বহু পর্যটক নীচে নেমে বেঙ্গল সাফারিতে আসছেন। স্বাভাবিক জঙ্গলে ঘেরা সাফারির মজা নিয়ে রাতের ট্রেনে, বাসে বা পর দিন বিমানে ফিরে যাচ্ছেন।