করোনেশন সেতুর উপর গাড়িতে বিস্ফোরণ। —নিজস্ব চিত্র
সেবকের করোনেশন সেতুর উপর আচমকা বিস্ফোরণ ঘটল একটি গাড়িতে। হেরিটেজ ঘোষিত হওয়া ওই সেতুর উপর এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘিরে যখন স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তখন তাঁরা জানতে পারেন, ওই সেতুর উপর শ্যুটিং চলছিল। শ্যুটিংয়ের প্রয়োজনেই একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, প্রশাসন কী ভাবে একটি হেরিটেজ সেতুর উপর শ্যুটিং করার অনুমতি দিল? শুধু তাই নয়, বিস্ফোরণ দৃশ্যও কী ভাবে সেতুর উপর শ্যুট করা হল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার এসপি, অতিরিক্ত এসপি ও ডিআইজি সেতু পরিদর্শনে যান। ঘটনার সঙ্গে এলাকার যাঁরা জড়িত দার্জিলিঙের এসপি সন্তোষ নিম্বালকর ও কালিম্পং এসপি অপরাজিতা রাইয়ের উপস্থিতিতে তলব করা হয় বেশ কয়েক জন স্থানীয়কে, যাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তলব করা হয় লাইন প্রযোজকদেরও। দীর্ঘ ক্ষণ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, শ্যুটিঙের অনুমতি চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি। নজর এড়িয়ে বিস্ফোরণের দৃশ্য শ্যুট করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্তোষ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
স্থানীয় সুত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ একটি গাড়ি থেমে যায় ঐতিহ্যবাহী ওই করোনেশন সেতুর উপর। গাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হতে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছু ক্ষণের মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে ওই গাড়িটিতে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে গাড়িটিতে। সেই সঙ্গে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে সেবক এবং মংপং থানার পুলিশ। হেরিটেজ সেতুতে কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে করোনেশন সেতু বা সেতুর কোনও স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভৌগলিক দিকে থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে করোনেশন সেতু। এক দিকে শিলিগুড়ি এবং অন্য দিকে ডুয়ার্সের মালবাজার, ওদলাবাড়ি এবং অসমের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেছে ওই সেতু। ব্রিটিশদের হাতে তৈরি হওয়া ওই স্থাপত্যের উপর এমন শ্যুটিংয়ের অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে বিস্ফোরণের ওই ভিডিয়ো ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। পরে জানা যায়, অভিনেতা বিনোদ মেহরার ছেলে রোহন মেহরা অভিনীত একটি হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘কালার’-এর শ্যুটিং হচ্ছিল। প্রথমে ওই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং হয়েছে টাকদহের ১২ নম্বর কলোনির বাংলোতে। তার পর দার্জিলিংয়ের একটি হোটেল-সহ ম্যাল রোডেও শ্যুটিং হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং হচ্ছিল করোনেশন ব্রিজে। সেই শ্যুটিং-এর প্রয়োজনেই বিস্ফোরণ করানো হয় একটি গাড়িতে। প্রশ্ন উঠছে, সেবকের করোনেশন সেতু হেরিটেজ। তার উপর ব্রিটিশ আমলের ওই ঐতিহাসিক সেতু এমনিতেই দুর্বল। সে সব সত্ত্বেও কী ভাবে পুলিশ প্রশাসন ওই সেতুর উপর শ্যুটিংয়ের অংশ হিসেবে বিস্ফোরণ ঘটানোর অনুমতি দিল। এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম এবং পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বালকর।
তবে কার্শিয়াঙের মহকুমাশাসক ইজাজ আহমেদ বলেন, ‘‘আমার কাছে এমন কোনও তথ্য নেই। পুরো বিষয়টা জানার পর বলতে পারব।’’ হেরিটেজ সেতুর উপর এ ভাবে শ্যুটিং বা বিস্ফোরণ করানো যেতে পারে? মহকুমাশাসকের জবাব, ‘‘নিয়মটা জানি না। জেনে বলতে পারব।’’