মদনমোহন মন্দিরে পুরোদমে চলছে মহালক্ষ্মী পুজোর প্রস্তুতি। — নিজস্ব চিত্র।
গোটা বাংলা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো দেখতে অভ্যস্ত, সেই সময় কোচবিহারের মানুষ মেতে ওঠেন মহালক্ষ্মীর পুজোয়। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজো ছিল কোচবিহারের রাজপরিবারের ব্যাপার। এখন রাজা নেই, কিন্তু মহালক্ষ্মী পুজো এখনও একই রকম। রীতি মেনে আজও রাজ পরিবারের মহালক্ষ্মী পুজো হয়। পুজোর বয়স প্রায় ৪০০ বছর। এক সময় কোচবিহারের রাজপ্রাসাদে এই মহালক্ষ্মীর পূজো হলেও বর্তমানে পুজো হয় মদনমোহন মন্দিরে। লক্ষ্মীপুজোর আর বেশি দেরি নেই। তাই মন্দির চত্বরে জোর তৎপরতা। প্রস্তুতিও শেষের পথে।
কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে এক সময় রাজবাড়িতেই মহালক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করা হত। মহারাজা ও রাজপরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশ নিতেন পুজোতে। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব পালন করে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্টবোর্ড। রাজা না থাকলেও সেই পুরনো নিয়ম মেনে মহা ধুমধাম সহকারে মহালক্ষ্মী পুজো আজও কোচবিহারের অন্যতম পরিচিতি হয়ে আছে। লক্ষ্মীপুজোর দিন রাজ পরিবারের মহালক্ষ্মীর পাশাপাশি দেবরাজ ইন্দ্রেরও পুজো হয় ওই মদনমোহন মন্দিরেই। লক্ষ্মীপুজোর দিন পুজো দেখতে ঢল নামে ভক্তদের। তবে সাধারণ লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে রাজ আমলের মহালক্ষ্মী পুজোর পার্থক্যও রয়েছে কিছু। রাজ পরিবারের মহালক্ষ্মী পুজোয় রয়েছে বলি প্রথা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন মহালক্ষ্মী পুজোতে জোড়া পায়রা বলি দিয়ে অন্নভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে কোচবিহারে। রাজ আমল থেকেই এই রীতি পালিত হয়ে আসছে। লক্ষ্মী প্রতিমার সঙ্গেও মহালক্ষ্মী প্রতিমার পার্থক্য রয়েছে। এখানে মহালক্ষ্মীর বাহন হিসেবে প্যাঁচার পরিবর্তে থাকে হাতি।
মন্দির চত্বরেই তৈরি হয় দেবীর প্রতিমা। খড়ের উপর মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শেষ। এ বার জোরকদমে চলছে মূর্তি গড়ার কাজ। এই মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা হয়। অনেকেই বলেন, সব নিয়মই নাকি রাজ আমল থেকে পালিত হয়ে আসছে।
কোচবিহারের রাজ পুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, রাজ আমলের সমস্ত নিয়ম মেনেই মহালক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজো প্রায় ৪০০ বছর পুরনো। এক সময় রাজ বাড়িতেই মহালক্ষ্মীর পুজো হত। সেই সময় মহারাজা নিজে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমানে মদনমোহন মন্দিরে সেই রাজ আমলের রীতি মেনে পুজো করি। বহু ভক্ত লক্ষ্মী পুজোর দিন মহালক্ষীর পূজা করতে মদনমোহন মন্দিরে আসেন। এই পুজো কোচবিহারের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।’’