শোক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন গণেশ কর্মকার (বাঁ দিকে) ও রাজু ঋষির (ডান দিকে) মেয়ে। মঙ্গলবার। মালদহে। নিজস্ব চিত্র।
সকাল হতেই ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান স্বামী। দুপুরে বাড়িতে খেতেও আসতে পারেন না তিনি। টাকা খরচ করে দোকানের খাবারও কিনে খান না। তাই রোজকার মতো মঙ্গলবারেও আঁধার থাকতেই ঘুম থেকে উঠে স্বামীর জন্য রুটি, আলুভাজা তৈরি করে দেন অরুণা ঋষি। ইংরেজবাজারের নেতাজি কর্মাশিয়াল মার্কেটে আগুনে মৃত শ্রমিক রাজু ঋষির (৪৮) স্ত্রী তিনি। ইংরেজবাজারের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের হঠাৎ কলোনির টালির ভাঙাচোরা বাড়ির বারান্দায় বসে শোকার্ত আত্মীয়দের কাছে এমনই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ দিন দুপুরে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা কথা তাঁকে জানানো হয়। অরুণা বললেন, “আর কার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠে টিফিন তৈরি করব! আমার পরিবারটাই তো শেষ হয়ে গেল! তাঁর রোজগারেই তো পুরো পরিবার চলছিল।”
এমনই আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছে বাজারের অগ্নিকাণ্ডে মৃত গণেশ কর্মকারের (৫১) কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের বাহান্নবিঘা গ্রামের বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী সবিতা কর্মকার বলেন, “রোজকার মতো এ দিনও ভোর ৫টাতেই ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। টাকা খরচ হবে বলে, দোকানে খাবার কিনে খায় না। তাই টিফিন-বাটিতে খাবার নিয়ে যেত।” কী করে এমন ঘটনা ঘটল! প্রশ্ন করেন তিনি।
পরিবারের দাবি, দীর্ঘ বছর ধরে রথবাড়ির নেতাজি কর্মাশিয়াল মার্কেটে গণেশ ও রাজু শ্রমিকের কাজ করতেন। রাজুর চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে এক ছেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। মেয়ের বিয়ে হলেও বাবার কাছেই থাকেন। দুই ছেলে কাজ করেন না। আর গণেশের তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেরাও শ্রমিকের কাজ করেন। এ দিন রাজুর বাড়িতে গিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন এলাকারই একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজল গোস্বামী। তিনি বলেন, “পরিবারটির দেহ সৎকার করার মতো সামর্থ্য নেই।”
এ দিন মৃতদের বাড়িতে যান ইংরেজবাজারের বিডিও সৌগত চৌধুরী, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রতিভা সিংহ। সৌগত বলেন, “পরিবার দু’টির পাশে প্রশাসন রয়েছে। দেহগুলি সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” আর্থিক ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতিও। মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “পরিবার দু’টির কোনও রকম যাতে অসুবিধে না হয়, তা আমরা দেখব।”