ধর্না: পাহাড়ে আন্দোলন। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
দার্জিলিং, কালিম্পং পাহাড়ের ১১টি জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেরি করায় গোর্খাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন খোদ দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। তাঁর যুক্তি, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় সমস্যা বাড়ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়াও পাহাড়, তরাই এবং ডুয়ার্সে পাহাড়ের বাসিন্দারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে দেশে এনআরসি, সিএবি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাহাড়ের ওই ১১টি জনজাতির তফসিলির জনজাতির স্বীকৃতি না থাকায় এই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করছে না, সংসদে বলেন রাজু বিস্তা। বুধবার লোকসভার জিরো আওয়ারে সাংসদ বিষয়টি তোলেন।
সংসদের দাবি, ২০১৬ সাল থেকে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির অন্য নেতারা ১১টি জনজাতিকে তফসিলি জনজাতিতে অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু গোর্থাদের ওই জনজাতিরা আজও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেবে বলেও সাংসদ লোকসভায় আশা প্রকাশ করেছেন। রাজু বলেছেন, ‘‘আমি সরকারিস্তরে আলোচনা শুরু করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারকেও বলছি। দ্রুত বিষয়টির স্থায়ী সমাধান দরকার। নইলে এনআরসি, সিএবি-র প্রক্রিয়া নিয়ে গোর্খারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এই মাটি গোর্খাদের, তার সরকারি তকমাও প্রয়োজন।’’
লোকসভায় সাংসদ জানান, ১৯৪১ সালের জনগণনা অবধি গোর্খাদের ১৩টি জনজাতিকে ‘পাহাড়ি আদিবাসী’ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৫০ সালে দেশের তফসিলি জনজাতির তালিকা থেকে পাহাড়ি আদিবাসীদের বাদ দেওয়া হয়। সেই সময় গোর্খাদের সঙ্গে কোনও স্তরেই আলোচনা করা হয়নি। কোনও প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। কোনও সংগঠনের সঙ্গে কথাও বলা হয়নি। এক অর্থে গোর্খাদের পাহাড়ের ভূমিপুত্রের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়। তাই এখন স্বীকৃতি প্রয়োজন।
পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতির দলের নেতাদের মতে, অসমের এনআরসি চালু হতেই দার্জিলিং পাহাড়ের গোর্খাদের একটি বড় অংশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে, অসমে এনআরসির তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে লক্ষাধিক গোর্খা আছেন। এতে বিজেপিকে নিয়ে পাহাড়বাসীদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। যাকে সামনে রেখে মোর্চার বিনয় তামাং, অনীত থাপারা আন্দোলনে নেমে পড়েছেন। বৃহস্পতিবারও দার্জিলিঙে এনআরসি এবং সিএবি-বিরোধী প্রচার চলেছে। বুধবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় কয়েক মাস আগেই প্রথমবার অসমের গোর্খারা সমস্যায় পড়েছেন বলে বিজেপি সাংসদ স্বীকার করেছিলেন। এ বার তিনি তফসিলি জনজাতির স্বীকৃতির দাবি তুলে পাহাড়বাসীর পাশে থাকতে চাইছেন।
মোর্চার বিনয়পন্থী নেতাদের বক্তব্য, সরকারিভাবে সিকিমের সঙ্গে দার্জিলিঙের ১১টি জনজাতির তফসিলি জনজাতির বিষয়টি গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ঝুলে রয়েছে। সংসদ, মন্ত্রকের মধ্যে ফাইল ঘুরছে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে পুরোপুরি হাঁটেনি বলেও অভিযোগ। ওই নেতাদের বক্তব্য, ‘‘পরপর তিনবার লোকসভা, পাহাড়ের বিধানসভায় জেতার সময় বিজেপি পাহাড়বাসীর দাবিকে (আলাদা রাজ্য) বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও আজ অবধি কিছু করেনি। এ ক্ষেত্রে কতটা কী করবেন, তাই এখন দেখার।’’