সহকর্মীর মৃত্যুতে ‘শোকপালন’-এর ছুটি মেলেনি। এর প্রতিবাদে অতিরিক্ত জেলা জজের (এডিজে) এজলাস লাগাতার বয়কট শুরু করেছেন বসিরহাট আদালতের আইনজীবী ও ল’ক্লার্করা। ৬ জুন থেকে চলছে এই পরিস্থিতি। দূরদূরান্ত থেকে এসে হয়রান হতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। অনেকের জামিনও আটকে।
মঙ্গলবার ওই এডিজে ভারতী ভট্টাচার্যের অপসারণ চেয়ে তাঁর ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। এডিজে সেখান থেকে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (এসিজেএম) ঘরে গেলে সেখানে গিয়েও অবস্থানে বসেন। ‘‘হায় হায় এডিজে, শেম শেম এডিজে’’— স্লোগান ওঠে। ভারতীদেবী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। মুখ খোলেননি এসিজেএম-ও।
দেশের প্রতিটি আদালতে যে ভাবে মামলার পাহাড় জমছে, সেখানে একটি কাজের দিনও নষ্ট করা উচিত নয় বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ, কাজ বন্ধ রেখে কোনও রকম বিক্ষোভ-আন্দোলন করতে পারবেন না আইনজীবীরা। কিন্তু বিভিন্ন আদালতে নানা ছুতোয় আইনজীবীদের কর্মবিরতি পালন বা এজলাস বয়কট এক রকম দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। এ নিয়ে বহু বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরও। এর আগে শ্রীরামপুরের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে আইনজীবীরা পঞ্চাশ দিনেরও বেশি এজলাস বয়কট করেছিলেন। শেষে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে সরতে হয়েছিল ওই বিচারককেই। ডায়মন্ড হারবার, শিলিগুড়ি আদালতেও লাগাতার কর্মবিরতির নজির আছে।
বসিরহাটের আন্দোলনকারী আইনজীবীরা জানান, ৫ জুন ফৌজদারি আদালতের আইনজীবী কৌশিক সরকারের মৃত্যু হয়। রীতি হল, আইনজীবী, ল’ক্লার্ক অথবা কোনও আদালত-কর্মীর মৃত্যু হলে একদিনের কর্মবিরতি পালন করা হয়। কিন্তু কৌশিকবাবুর মৃত্যুতে এডিজে ভারতীদেবী এজলাস বন্ধ রাখেননি। তারই প্রতিবাদে তাঁর এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত। এডিজে-র অপসারণ চেয়ে হাইকোর্ট, জেলা জজ-সহ সংশ্লিষ্ট নানা মহলে দরবার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বসিরহাট ফৌজদারি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও নিয়মই মানতে চান না ওই এডিজে। আমাদের এক সঙ্গীর মৃত্যুতে যখন সকলে শোকস্তব্ধ হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন, সে সময়ে তিনি ছুটি ঘোষণা না করে অনৈতিক ও অমানবিক কাজ করেছেন।’’ এডিজে-র নানা ব্যবহারে তাঁরা অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। বিক্ষোভ এবং এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্তে তাঁরাও সামিল হয়েছেন বলে জানান বসিরহাটের দেওয়ানি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রথীশ দাস।
হিঙ্গলগঞ্জের সুন্দরবন-লাগোয়া সামসেরনগর থেকে একাধিক নদী পেরিয়ে মঙ্গলবার বসিরহাট আদালতে এসেছিলেন হরিপদ মণ্ডল। এই নিয়ে গত দু’মাসের মধ্যে চারবার এডিজে-র আদালতে এসেও কোনও কাজ হয়নি তাঁর। হরিপদবাবু বলেন, ‘‘চেয়েচিন্তে টাকা জোগাড় করে আসতে হয়। কিন্তু আইনজীবীরা কেউ কোনও কাজই করছেন না। আমাদের মতো বহু মানুষ বিচার চাইতে এসে বার বার খালি হাতে ফিরছেন।’’