মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় কোনও বিতর্কিত প্রশ্ন রাখতে নারাজ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। —ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে আর কোনও বিতর্ক চাইছে না মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শনিবার পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেটি জারি করা হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীন স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশে। তাতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় কোনও প্রশ্নপত্রে কোনও রকম বিতর্কিত প্রশ্ন রাখা চলবে না। এমন কোনও প্রশ্ন করা যাবে না, যা কোনও বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করে। সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মর্যাদাহানি হয়, তেমন কোনও প্রশ্নও টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে যেন না থাকে। সঙ্গে বলা হয়েছে, স্কুলের পরীক্ষাপর্ব মিটে গেলে সব প্রশ্নপত্র যেন ইমেল মারফত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার টেস্টে বেশ কিছু স্কুল নিজেদের প্রশ্নপত্রে এমন কিছু প্রশ্ন রেখেছিল, যা নিয়ে বড়সড় বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের একটি স্কুলের অঙ্কের প্রশ্নপত্র ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেখানে পাটিগণিতের এক অঙ্কে 'শুভেন্দু' ও 'নওশাদে'র মধ্যে ভাগাভাগির উল্লেখ করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে নন্দীগ্রাম বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আর নওশাদ সিদ্দিকি হলেন বিধানসভায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর একমাত্র বিধায়ক। বিরোধী দলের দুই বিধায়কের নাম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত হওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি। ছবি: সংগৃহীত।
আবার, মালদহের একটি মিশনারি স্কুলের মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ভুগোলের প্রশ্নপত্রে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ‘আজাদ কাশ্মীর’ হিসেবে উল্লেখ করতে বলায় বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এই দু'টি ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাই এ বার আগে থাকতেই বিজ্ঞপ্তি মারফত নিজেদের অবস্থান স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকে জানিয়ে দিল তারা। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সভাপতি বিজন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এমন কোনও শব্দের ব্যবহার করা উচিত নয়, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিগত দিনে কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। আগামী দিনে যাতে এই ধরনের বিতর্ক তৈরি না হয়, তার জন্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের সামনে কোনও বিশেষ মতাদর্শ প্রকাশ করবেন, তা কখনওই কাম্য নয়।’’
তবে এই বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে বামমনস্ক শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে সামেটিভ পরীক্ষায় এই বিতর্কিত প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তা কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত বইতেই রয়েছে। তা হলে প্রথমেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উচিত সিলেবাসটিকে দূষণমুক্ত করা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ইতিহাস বইতেও বহু বিতর্কিত বিষয় রয়ে গিয়েছে, সেগুলিও ঠিক করা হোক।’’