মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের ক্লাব সংগঠনগুলি ‘পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য’ আর কোনও সরকারি টাকা পাবে না। সিদ্ধান্ত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, কয়েক বছর ধরে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে, বহু ক্লাবই তার খরচের কোনও যথাযথ হিসাব জমা দেয়নি। ফলে এই সিদ্ধান্ত। এই অনুদান বন্ধের খবর যখন প্রকাশ্যে আসছে, ঘটনাচক্রে সেই সময়েই দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে দেওয়া রাজ্য সরকারের অনুদান নিয়ে তির্যক মন্তব্য শোনা গিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতির গলায়। তমলুকের এক পুজো কমিটির করা মামলার শুনানি চলাকালীন শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিংহ বলেন, ‘‘আমি অনেক মামলা শুনেছি, যেখানে মানুষ বেতন পাচ্ছেন না, চাকরি পাচ্ছেন না, পেনশন পাচ্ছেন না। আর পুজো কমিটিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে!’’ তবে নবান্ন সূত্র বলছে, বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে ক্লাবের টাকা বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরের বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ক্লাবগুলির পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেন। বাছাই করা ক্লাবগুলি প্রথম বছরে এককালীন ২ লাখ টাকা এবং পরবর্তী ৩ বছর ১ লাখ করে মোট পাঁচ লাখ টাকা পেত। যদিও কোভিড পর্বে, ২০২০ সাল থেকে এই প্রকল্পে অর্থ দেওয়ার কাজ স্থগিত রাখা হয়। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, এই অনুদান আর দেওয়া হবে না।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথম বছর ৭৮১টি ক্লাব এই অনুদান পেয়েছিল। সেই খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। পরের বছর ১৫০০ ক্লাবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার জন্য রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হয়েছিল। প্রকল্পের সূচনালগ্ন থেকেই এই আর্থিক অনুদানকে ‘রাজনৈতিক উপঢৌকন’ বলে আক্রমণ করেছিল বিরোধী দলগুলি। তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, পরবর্তী কালে আব্দুল মান্নান এই প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এই অনুদান যখন দেওয়া হত, সেই সময় বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে ছিলেন। পরে তিনিও অভিযোগ করেন, এই প্রকল্প মারফত ক্লাব সংগঠনগুলির রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। কারণ, অনুদানের জন্য নতুন ক্লাবের নাম নথিভুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শাসকদলের বিধায়কদের।
কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই অনুদান? প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, রাজ্য সরকার শর্ত দিয়েছিল, যে সব ক্লাব সংগঠন এই অর্থ নিচ্ছে, তাদের খরচের হিসাব (ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্লাবই সেই হিসাব জমা দিতে পারেনি। মূলত সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে।