একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য রাজ্যের সরকারি স্কুলের জন্য নির্ধারিত ‘ফি’-এর বেশি নিতে পারবে না সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুল। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) অফিস সূত্রের খবর, পরীক্ষাগার ব্যবহার করতে হয় এমন বিষয় নিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ফি বেশি নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ফি চাওয়ার জন্য পড়ুয়ারা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। এই সব অভিযোগ দফতরে আসার পরেই শুক্রবার ডিআই এই নির্দেশ জারি করেন। নয়া নির্দেশে বলা হয়েছে, বর্ধিত ফি নেওয়াটা সরকারের নীতির বিরোধী। ফি দিতে না-পারলেও পড়ুয়াদের ভর্তি নিতে হবে।
শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন অবৈতনিক। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য সরকার আইন পাশ করে জানায়, পঞ্চম থেকে অষ্টম
শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির সময়ে বছরে এক বার ‘উন্নয়ন ফি’ হিসেবে স্কুলগুলি ২৪০ টাকা করে নিতে পারবে। সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট টাকা বেঁধে দিলেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত এই স্কুলগুলির ক্ষেত্রে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সে ভাবে কোনও নির্দিষ্ট টাকা বেঁধে দেওয়া নেই। সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ল্যাবরেটরি ফি-সহ মোট ২৯৫ টাকা নেওয়া হয়। ল্যাবরেটরি ব্যবহার না-করলে ফি ২৫০ টাকা। ওই টাকাই এখন সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিকে নিতে বলা হয়েছে।
এই নির্দেশ পেয়ে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই বিভ্রান্ত। তাঁদের একাংশের মতে, সরকারি স্কুলগুলি ওই ভর্তির ফি নিতে পারে। কারণ, সরকারি স্কুলে একটি আলপিন কেনার টাকাও সরকার দেয়। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকার পোষিত স্কুলে তা নয়। আংশিক সময়ের শিক্ষক, আংশিক সময়ের ল্যাবরেটরি অ্যাটেন্ডেন্ট, নিরাপত্তাকর্মী— সকলের বেতন স্কুলকেই দিতে হয়। এর সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ রয়েছে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যে সব স্কুল ৪০০০-৫০০০ টাকা নিচ্ছে, সরকার সেই বিষয়টি দেখুক। কিন্তু ৩০০ টাকার কমে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি নিলে
স্কুল চালানো কষ্টকর।’’ গরফা ধীরেন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপ সেনগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘যে পড়ুয়ারা ফি দিতে পারছে না, তাঁদের ফি মকুব, পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে এত কম টাকা নিয়ে পঠনপাঠনের মান বজায় রাখা অসম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে সম্পদশালী স্কুলগুলি অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে, আর আমাদের যে অর্থ নিতে বলা হচ্ছে তা দিয়ে স্কুল চলে না। এই ব্যবধান ঘোচানো দরকার।’’