জাতীয় পরিবেশ আদালত। ফাইল চিত্র।
বার বার সতর্ক করে হুঁশিয়ারি, কৈফিয়ত তলবের পরেও রাজ্য সরকারের হেলদোল নেই। এই অবস্থায় সুন্দরবনের দুলকি এলাকার একটি বিলাসবহুল পর্যটন রিসর্টের বেশির ভাগ অংশই ভেঙে দেওয়ার কড়া নির্দেশ পাঠিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তাতেও যে নবান্নের টনক বিশেষ নড়েছে, তার প্রমাণ মেলেনি। ওই নির্দেশের কথা শুনে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরে রাজ্য প্রশাসন এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবে।’’
পরিবেশ বিধি ভাঙার উত্তরোত্তর প্রবণতায় ঘোর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশকর্মীরা। আট মাস আগেই নবান্নে চিঠি পাঠিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত সতর্ক করে দিয়েছিল যে, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোল ঘেঁষা অধিকাংশ হোটেল-রিসর্ট, এমনকি সরকারি পর্যটন আবাসও গড়া হয়েছে পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে। ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জ়োন’ বা উপকূল বিধির তোয়াক্কা না-করেই নদী-নালা-খাঁড়ির বুকে কী ভাবে ওই সব পর্যটন আবাস গড়ে উঠল, সেই বিষয়ে কৈফিয়তও তলব করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু সরকারের সাড়া না-মেলায় এ বার দুলকির ওই রিসর্ট ভাঙার নির্দেশ।
আদালতের ওই নির্দেশ রূপায়ণে স্থানীয় প্রশাসন কতটা তৎপর হবে, রাজ্যের পরিবেশবিদদের অনেকেই তা নিয়ে সন্দিহান। রাজ্যের পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গের তরাইয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রিসর্টগুলির অধিকাংশই চলে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায়। তাই তাদের অনিয়ম ঠেকাতে প্রশাসন কি সাহস দেখাবে!’’
সুন্দরবনের দুলকি এলাকায় ‘বেআইনি নির্মাণ’ হিসেবে চিহ্নিত ওই রিসর্ট নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা তথা বিশিষ্ট পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পরিবেশ নিয়ে রাজ্য কিংবা দিল্লি, কারও যে মাথাব্যথা নেই, বাজেট বরাদ্দে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের যে-হোটেলটি নিয়ে বিতর্ক, সেটি যে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়েই আইন লঙ্ঘন করে গড়া হয়েছে, প্রশাসনও তা জানে। ওখানে অনিয়মই নিয়ম!’’ পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বাসন্তী থেকে গোসাবা, সুন্দরবনের অধিকাংশ বেসরকারি হোটেল উপকূল বিধির তোয়াক্কা না-করেই গড়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছু সরকারি পর্যটন আবাসও গড়া হয়েছে বাদাবন (ম্যানগ্রোভ) উচ্ছেদ করে। সুন্দরবনের বাদাবন কিংবা বাঘ নয়, রাজ্য সরকারের কাছে ঢের মূল্যবান অনিয়মের পথে পর্যটনের প্রসার এবং তার মুনাফা।’’
সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য পরিবেশবিদদের আশঙ্কা ও অভিযোগ মানতে রাজা নন। তাঁর যুক্তি, ‘‘সুন্দরবনে পরিবেশ বাঁচাতে ইতিমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘ইকো সেনসিটিভ জ়োন’। যে-সব বেসরকারি রিসর্ট নিয়ম ফাঁকি দিয়ে তৈরি হয়েছে, তাদের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে গড়া হয়েছে কমিটি।’’ তবে সেই কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘পরিবেশ বিধি মানতে গেলে সুন্দরবনের গহিনে গড়ে ওঠা রিসর্টগুলির ৭০ শতাংশই ভেঙে ফেলতে হয়। সরকারের কাছে সেই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বটে, তবে সেই ফাইলের ফিতের ফাঁস আজও খোলা হয়নি!’’