গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কৃষক আন্দোলনে কয়েকশো মৃত্যুর ঘটনায় প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূল বলেছে, আইন প্রত্যাহারই যথেষ্ট নয়। এই আন্দোলনে ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তা ভুললে চলবে না। তাই দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা চাইতে হবে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিজেপির নির্মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কৃষকরা বিজয়ী হয়েছেন।’ তার পর একটি কবিতায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘ঔদ্ধত্য-অহঙ্কার ভগ্ন/ রৌদ্র-বৃষ্টি- ঝড়ঝঞ্ঝা/ কত রাত গেছে পেরিয়ে/ অস্ত্রের ঝঙ্কার কেড়ে নিল প্রাণ/ মৃতদেহ লাশকাঁটা জড়িয়ে।’
একই ভাবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘জনমতের চাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘এটাই গণতন্ত্রে ভিন্নমতের প্রকৃত শক্তি।’
বিতর্কিত এই কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বরাবরই সরব ছিলেন মমতা। তৃণমূলের নেতা- সাংসদদের পাঠিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন তিনি। তাঁর সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের অতীতকে কৃষি আইন বিরোধিতার এই আন্দোলনের সঙ্গে এক বন্ধনীতে জুড়তে চেয়েছে তৃণমূলও। সেই সূত্রে দিল্লির আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনের নেতারাও রাজ্যের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষেই প্রচার করে গিয়েছেন। ফলে কেন্দ্রের এ দিনের সিদ্ধান্তে দলের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিতে তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফরে কেন্দ্রের এই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন দলীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল মুখপাত্র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এ দিন বলেন, ‘‘আইন প্রত্যাহার করলেই হবে না। লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের গাড়ির চাকায় পিষে মেরেছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই তিনটি আইনের প্রতিবাদে গত বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অকালি নেতা হরসিমরত কৌর বাদলের পদত্যাগের পরে বিজেপি বেশ চাপে পড়ে যায়। জটিলতা বাড়িয়ে স্পষ্ট হয়, পঞ্জাবের অপেক্ষাকৃত ধনী কৃষকদের কাছে যদি এটা প্রতিবাদের বিষয় হয়, তা হলে দরিদ্রতর কৃষকদের কাছে তা মরা-বাঁচার প্রশ্ন হয়ে উঠতে চলেছে। দেরি না-করে তখনই বিষয়টির সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নেন মমতা। সেই সূত্রেই সংসদে বিজেপি- বিরোধিতায় সামনে চলে আসে তৃণমূল। আইন প্রত্যাহারের পরেও সংসদের আসন্ন অধিবেশনে ক্ষতিপূরণ -সহ একাধিক দাবিতে সেই পথেই দলের রণকৌশল ঠিক করছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। সেই ইঙ্গিত দিয়ে সুখেন্দুশেখর এ দিন বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত বুঝে এই কৌশল নিয়েছে বিজেপি। তাই সংসদে আইন বাতিলের সঙ্গে কেন্দ্র আরও কী পদক্ষেপ করে তা দেখতে হবে।’’