Calcutta High Court

নারদ মামলা: কল্যাণের হলফনামায় মন্তব্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ‘ভূমিকা’ নিয়ে

কল্যাণের হলফনামা অনুযায়ী, হাই কোর্টের ‘মাস্টার অব রস্টার’ প্রধান বিচারপতি। তিনিই ঠিক করেন কোন মামলা কোথায়, কবে শুনানি হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ২০:৫৫
Share:

আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ‘ভূমিকা’ নিয়ে গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নারদ মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলা শুনছেন। এ বার এই মামলায় বেঞ্চ গঠন এবং প্রধান বিচারপতির ‘ভূমিকা’ নিয়ে মন্তব্য করে তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাই কোর্টে একটি হলফনামায় দাখিল করেছেন।

Advertisement

নারদ-কাণ্ডে গত ১৭ মে রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওই দিনই বিকেলে বিশেষ আদালতে জামিন পান ধৃতেরা। কিন্তু হঠাৎ রাতে ওই জামিনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাঁদের দাবি না শুনেই একতরফা ভাবে সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে জামিন স্থগিত করে ডিভিশন বেঞ্চ। পরে অবশ্য এই মামলায় ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। বৃহত্তর বেঞ্চে ধৃতেরা জামিন পেলেও বর্তমানে সেখানেই চলছে নারদ মামলার শুনানি। এই মামলায় প্রথমে ডিভিশন বেঞ্চ এবং তার পরে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। গত মঙ্গলবার বেঞ্চের শুনানির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। বৃহস্পতিবার ওই একই বিষয়ে হাই কোর্টে হলফনামা দাখিল করেন কল্যাণ। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ‘ভূমিকা’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন তিনি।

কল্যাণের হলফনামা অনুযায়ী, হাই কোর্টের ‘মাস্টার অব রস্টার’ প্রধান বিচারপতি। তিনিই ঠিক করেন কোন মামলা কোথায়, কবে শুনানি হবে। নারদ মামলার ক্ষেত্রেও প্রধান বিচারপতির ভূমিকা ছিল। তাঁর নির্দেশেই ১৭ মে গঠন হয় ডিভিশন বেঞ্চ। ওই বেঞ্চই নিম্ন আদালতের রায়কে স্থগিত করে অভিযুক্তদের জেলবন্দির নির্দেশ দেয়। কল্যাণের হলফনামা অনুযায়ী যা নিয়মবিরুদ্ধ। নিয়ম অনুযায়ী, নারদ মামলা বা এই ধরনের মামলা সাধারণত হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানি হয়। সিঙ্গল বেঞ্চের রায় অমনোনীত হলে তা অন্য কোনও বেঞ্চে যেতে পারে না। সিঙ্গল বেঞ্চের পরেই তা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে এক্তিয়ার ভুক্ত হয়। কিন্তু নারদ মামলার ক্ষেত্রে প্রথমেই সরাসরি ডিভিশন বেঞ্চ এবং তার পর বৃহত্তর বেঞ্চ তৈরির নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির ওই ‘ভূমিকা’র কথাই হলফনামায় লিখেছেন কল্যাণ।

Advertisement

এর আগে গত ২৮ মে নারদ মামলার শুনানি প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিন্‌হা। তিনি ওই বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠিও লিখেছিলেন। চিঠিতে বিচারপতি সিন্‌হা জানিয়েছিলেন, ভারতীয় সংবিধানের ২২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শুধুমাত্র সিঙ্গল বেঞ্চের কাছে কোনও দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা স্থানান্তরের দাবি জানানো যায়। কিন্তু তার পরেও ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে। এমনকি ওই আবেদনকে লিখিত হলফনামা বা রিট পিটিশন হিসেবেও গ্রহণ করা যায় না, কারণ তাতে আইনের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনও বিষয় উল্লেখ থাকে না।


প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বিচারপতি সিন্‌হার এই ক্ষোভকে অনেকে সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির বিদ্রোহের ঘটনার কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন চার প্রবীণ বিচারপতি। যা ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement