বিচারাধীন এক বন্দির মৃত্যুর পর পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠল বহরমপুরে।
শুক্রবার সকালে জাকির হোসেন নামে ওই বিচারাধীন বন্দিকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে কান্দির এসিজেএম আদালতে নিয়ে গিয়েছিল বহরমপুর থানার পুলিশ। বিচারক শ্রীধরচন্দ্র সিউ ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলে পুলিশ তাঁকে নিয়ে ফের বহরমপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সামনে গাড়ি থেকে নামানোর সময়ে বন্দির ‘নিথর’ দেহ নামায় পুলিশ। তখন জেল কর্তৃপক্ষ ওই বন্দিকে নিতে অস্বীকার করেন।
জেল সুপার অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা ওই বন্দিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলি। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন তা করতে চায়নি। জোর করে বিচারাধীন বন্দির নিথর দেহ জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিল।” শেষ পর্যন্ত বহরমপুর থানার পুলিশ ওই বিচারাধীন বন্দিকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কান্দির কুমারসণ্ড পঞ্চায়েতের রামেশ্বরপুর গ্রামের তৃণমূল কর্মী মফিজুল শেখের খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত রামেশ্বরপুরের কংগ্রেস সমর্থক জাকির হোসেন। যদিও সরাসরি খুনের নয়, বেআইনি অস্ত্র রাখা ও ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জাকিরের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, গত ৯ নভেম্বর গ্রেফতারের সময়ে পুলিশের মদতে শাসকদলের লোকজন বাঁশ-লাঠি-লোহার রড দিয়ে ব্যাপক মারধর করেছিলেন তাঁকে। জাকির হোসেনের এক আত্মীয়া রুবিসন বিবি বলেন, “প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পুলিশ শ্বশুরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুক্রবার আদালতে শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বুকে এবং পায়ে খুব ব্যথা বলে জানিয়েছিলেন।” জাকির হোসেনের আইনজীবী সমীরবরণ রায় বলেন, “আমার মক্কেলের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে বিচারকের কাছে চিকিত্সার সুব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলাম। বিচারক চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশও দেন। কিন্তু পুলিশ সিজেএম আদালত থেকে ৫০০ মিটার দূরে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।” ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা।
কান্দির বিধায়ক কংগ্রেসের অপূর্ব সরকার বলেন, “শাসকদলকে সন্তুষ্ট করতে কান্দি থানার আইসি আমাদের ওই সমর্থককে গ্রেফতারের সময়েই বেধড়ক মারধর করেন। এমনকী পুলিশের উপস্থিতিতে শাসকদলের লোকজনও মারধর করেন। পরে কান্দি থানা লক-আপেও পুলিশ তাঁকে মারধর করে বলে জেনেছি।”
এ দিকে, বিচারাধীন ওই বন্দির মৃতদেহ সুরতহালের রিপোর্টে শরীরে মারধরের বা কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ রয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করব না। তবে পুলিশ মারধর করেছে এমন কোনও অভিযোগের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”