অবশেষে ধরা পড়ল নবদ্বীপের নকল দুধ তৈরির কারবারের মূল পাণ্ডা সনাতন ঘোষ ওরফে সোনা। বুধবার সকালে নবদ্বীপের অভয় মা তলার বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৬ জুন রাতে নবদ্বীপের ঝাঁপানতলায় এক নকল দুধ তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে ৬ হাজার লিটারের বেশি নকল দুধ এবং দুধ তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম, একটি দুধ বহনকারী গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। তখন থেকেই ফেরার ছিলেন অভিযুক্ত সোনা। বাড়ি ফিরেছে এই খবরে এ দিন সকালে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে গত ৩১ মার্চ নবদ্বীপ ও বর্ধমানের সীমান্তে নবদ্বীপ রেলগেট লাগোয়া কলাবাগান এলাকায় হানা দিয়ে একই ভাবে প্রচুর নকল দুধ এবং তিন জনকে ধরেছিল পুলিশ। সে দিনের অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী স্বপ্ন দেবনাথ। কলাবাগানে যে কারখানায় নকল দুধ তৈরি হত তার সামনেই রয়েছে নবদ্বীপ শহর সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের দফতর। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, ওই দফতরের পিছনেই বছরের পর বছর ধরে নকল এবং বিষাক্ত দুধের কারবার ফেঁদেছিলেন কারখানার মালিক। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ৬ জুন রাত আটটা নাগাদ নবদ্বীপ পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাঁপানতলার ওই নকল দুধ তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করেছিল ওই বাড়ির মালিক মদনমোহন কুণ্ডু এবং এক কর্মী নীলকমল মণ্ডলকে। উদ্ধার করা হয় নকল দুধ ছাড়াও নানা রকম রাসায়নিক, ছানার জল, ময়দা, সোয়াবিন তেলও।
বুধবার ধৃতকে নবদ্বীপের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। নবদ্বীপ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নবেন্দ্যু মণ্ডল বলেন, “ধৃত সনাতন ঘোষ ওই নকল দুধ তৈরির কারখানার মালিক। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ২৬৯, ২৭০, ২৭২, ১২০(বি), ৩৪ ধারা এবং ফুড সেফটি এন্ড ষ্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৯ ও ৬৯ ধারায় মামলা চলছে।” প্রসঙ্গত ২৭২ ধারাটি এই রাজ্যে জামিন অযোগ্য ধারা বলে বিবেচিত হয়।
এলাকার বাসিন্দদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে বরফ কলের নাম করে নকল দুধের কারবার চালাচ্ছিলেন সনাতন ঘোষ। শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান থেকে পাত্র বোঝাই করে আসা ছানার জলের সঙ্গে অন্য জিনিস মিশিয়ে সিমেন্টের চৌবাচ্চায় তৈরি হত নকল দুধ। বিভিন্ন নামী এবং পরিচিত কোম্পানীর নাম লেখা দুধের ট্যাঙ্ক্যারে নিয়মিত রাতের অন্ধকারে ওই নকল দুধ নিয়ে সরবরাহ করা হত বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে।