জেলে বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু, বিক্ষোভ

বিচারাধীন বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হল বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার চত্বরে। জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলখানার শৌচালয়ের মধ্যে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে নিমাই দলুই (৪৬) আত্মঘাতী হন। কিন্তু পরিবারের লোকজন তা মানতে নারাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:১৩
Share:

ক্ষুব্ধ জনতা। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বিচারাধীন বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হল বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার চত্বরে। জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জেলখানার শৌচালয়ের মধ্যে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে নিমাই দলুই (৪৬) আত্মঘাতী হন। কিন্তু পরিবারের লোকজন তা মানতে নারাজ। শুক্রবার সকালে ওই মৃত্যুর খবর জানাতে বহরমপুরের কাঁঠালিয়া গ্রামের দলুইপাড়ায় পৌঁছলে বহরমপুর থানার পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, জেল হেফাজতের মধ্যে পুলিশ নিমাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।

Advertisement

জেল সুপার অরিন্দম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শৌচালয়ে গিয়ে জানালার লোহার রডের সঙ্গে গামছা বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন ওই বন্দি। শৌচালয় থেকে ফিরতে দেরি হওয়ার জন্য রক্ষী বিষয়টি দেখতে যায়। তখনই বিষয়টি জানতে পারা যায়। জেল হাসপাতালের চিকিৎসকও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গামছা কেটে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই ওই বন্দির মৃত্যু হয়েছে।”

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই বন্দির সঙ্গে কোনও গামছা ছিল না। তাহলে গামছা এল কোথা থেকে? সুপার জানান, অনেক সময়ে আবাসিকরা একে অন্যের গামছা ব্যবহার করে থাকেন। তবে গামছার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে এমন কোনও ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। এদিকে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ বহরমপুরের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু বিষয়টি জানার পরেই কয়েকশো গ্রামবাসী বহরমপুরে পৌঁছে মর্গ থেকে ওই মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে এসে জেলখানার সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জেল কর্তৃপক্ষ ও বহরমপুর থানার পুলিশ যৌথ ভাবে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে শান্ত করার পরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো সম্ভব হয়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ মে সাটুই-চৌরিগাছা পঞ্চায়েতের বাঁশাবাড়ি গ্রামের এক যুবককে রাস্তার ধারে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃতের পরিবার বেশ কয়েক জনের নামে বহরমপুর থানায় খুনের অভিযোগও দায়ের করে। ওই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই রাতে চার জনকে গ্রেফতার করে। পরে গত ১৭ মে গ্রামবাসীদের একাংশ নিমাই দলুইকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ জানায়, ধৃত নিমাই দলুইকে ১৭ মে বহরমপুরে সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ফের ২০ মে আদালতে হাজির করানো হলে বিচারকের নির্দেশে জেল হেফাজত হয়। ওই মামলার পরবর্তী দিন ছিল আগামী ৩১ মে। কিন্তু তার আগেই ওই বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু হওয়ায় গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

এদিন দুপুরে কয়েকশো গ্রামবাসী কাঁঠালিয়া থেকে বহরমপুরে আসেন। ততক্ষণে জেল কর্তৃপক্ষ গাড়িতে করে মৃতদেহ পুলিশ মর্গে পাঠিয়ে দেয়। ওই খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা মর্গে হাজির হন। গাড়ির চালককে মৃতদেহ ফের জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান তাঁরা। কিন্তু গাড়ির চালক গড়িমসি করায় উত্তেজিত বেশ কিছু গ্রামবাসী গাড়িতে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। পরে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় জেলখানার সামনে। গাড়িতে মৃতদেহ রেখে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।

এদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট কল্লোল ভট্টাচার্য জেলখানায় পৌঁছান সুরতহাল কররা জন্য। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের ভিডিও করে রাখা হয়েছে। কল্লোলবাবু বলেন, “গলায় গামছা বাঁধা অবস্থায় ছিল। শরীরের কোনও অংশে আঘাতের চিহ্ন পাইনি।” নিমাইয়ের ছেলে খোকন দলুই সস্ত্রীক রাজমিন্ত্রীর কাজে ওড়িশায় থাকেন। তিনি বলেন, “বাবা জেলে আছে শুনে এদিন সকালে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়িতে এসেই বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পারি। বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মা বীরভূমে এক মাসির বাড়িতে চলে গিয়েছে। সেখানে খবর পাঠানো হয়েছে।”

বিজেপি’র লিগ্যাল সেলের আহ্বায়ক সুধাংশু বিশ্বাস বলেন, “জেল হেফাজতে বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু হলে আইন মেনে যে সমস্ত কাজ হয়ে থাকে, তা করার জন্য জেল সুপারকে অনুরোধ জানিয়েছি। তবে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় প্রথম কে দেখেছে, তার সঙ্গে আমরা কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কথা বলতে দেওয়া হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement