কুচিয়ামোড়া বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে উঠলেও নতুন প্রজন্মের কিছু যুবক অবশ্য চেষ্টাটা শুরু করেছিলেন বছর কয়েক ধরে।
গ্রামের পুরনো ক্লাবগুলিকে সাজিয়ে গুছিয়ে শুরু করেন খেলাধুলা আর সংস্কৃতির চর্চা। সেই উদ্যোগী ছেলেপুলেদের তালিকায় প্রথম দিকেই ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত মোশারফ হোসেন।
খেলার মাঠ তৈরি করা থেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের এক জায়গায় জড় করে সংস্কৃতিচর্চার চেষ্টাটা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তবে বছরভর তো পারতেন না, ছুটি শেষে সীমান্তে ফিরে গিয়েও খোঁজ রাখতেন গ্রামের। কাশ্মীরে পাক সীমানায় দাঁড়িয়ে, ভিডিও কলে তিনি এখনও বলছেন, ‘‘দেখবেন, সব খারাপের শেষে একটা ভাল অপেক্ষা করছে। গ্রামে ফিরে সব সামলে নেব।’’
কুচিয়ামোড়ার কালি মুছতে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা, গ্রামে মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য টাকা তোলা, খেলার মাঠ তৈরি করা, গ্রামের যুবকদের একত্রিত করা—চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি এই এক দল নব্য
কুচিয়ামোড়ের বাসিন্দা।
গ্রাম বদলের এই চেষ্টা অবশ্য এই প্রথম নয়। মোশারফের মতোই অনেকেই কুচিয়ামোড়ার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা যে আগে করেননি এমন নয়। তাঁদের কেউ গ্রামের মাঠে চালু করেছিলেন ভলিবল প্রতিযোগিতা, কেউ বা নাটক, সন্ধের ক্লাবে বিতর্ক আলোচনা থেকে কখনও বা সাবেক বসে আঁকো প্রতিযোগিতা— তাতে গ্রাম বদলে ছিল কি না বলা দুষ্কর! তবে ক্রমেই শান্ত হয়ে আসছিল কুচিয়ামোড়া।
সেই স্তব্ধ গ্রামই ফের যেন আগ্নেয়গিরির মতো ফুঁসে উঠল।
আর তা দেখেই গ্রামের প্রবীণেরা বলছেন, ‘‘নাহ! এ গ্রাম বদলাবে না। গ্রামের কিছু লোক কুচিয়ামোড়াকে গুলি বারুদের আঁতুড়ঘর করেই রাখবে!’’ ফলে অনেকেই নিশ্চুপে গ্রাম ছাড়ছেন, হাল ছাড়ছেন গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
শনিবার খুনের ঘটনার পর যাঁরা আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আতঙ্কে তাঁরাও গ্রামে ফিরতে পারেননি এখনও। তাঁদের দাবি, কি করে ফিরব বলুন? এখনও শুনছি খুনের বদলা খুন ছাড়া মিটবে না। যে কোনও সময় আবার গ্রামে গন্ডগোল ছড়াতে পারে।
গ্রামে পুলিশি টহল রয়েছে বটে তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, সে সবের তোয়াক্কা করে না গ্রামের এক শ্রেণির লোক।
কারণ, এর আগেও পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে গ্রামের গন্ডগোল খুনোখুনি মেটাতে। এমনকি গ্রামে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল মাসের পর মাস।
যদিও জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, ‘‘আমরা কড়া নজর রাখছি ভরসা রাখুন, গ্রাম এ বার শান্ত হয়ে আসবে।’’ জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘গ্রামে নিয়মিত টহলদারি চলছে। বসেছে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। ফলে আমাদের পক্ষ থেকে কোন খামতি নেই, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করাই আমাদের এখন এক মাত্র লক্ষ্য।’’পুলিশের প্রতিশ্রুতি আছে, যেমন থাকে। আছে কুচিয়ামোড়ার ভয়। সন্ধে হলেই তাই ফাঁকা হয়ে যায় ভলিবলের মাঠ। দুয়ারে পড়ে খিল। রয়ে গিয়েছে ক্ষীণ আশা — কখনও কুচিয়ামোড়া তার বারুদের গন্ধ ভুলে ফের ভলিবলের মাঠে ফিরবে!