পোস্টার হাতে স্কুলপড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
জলবায়ু পরিবর্তনে তোলপাড় বিশ্ব। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০০ বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জেরে বেড়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আবহবিদদের মতে, বনজঙ্গল সাফ করে নগরায়ন এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপই দায়ী বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য। আর তাই সরকারি ভাবে হোক বা পুজো প্যান্ডেলে— সর্বত্র উঠে আসছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। এ বার শহরের উপকণ্ঠে একটি স্কুলের পড়ুয়ারাও একই পথে হাঁটল। স্কুলশিক্ষিকারা দিলেন পরিবেশ রক্ষার পাঠ।
২০২৩ সাল থেকে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে বছরের প্রথম সপ্তাহেই পালিত হয় ‘স্টুডেন্টস উইক’। শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ রাজ্যের শিক্ষা দফতরের। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা পাঠের মাধ্যমেই শুরু হয় উদ্যাপন।
গত ২ থেকে ৮ জানুয়ারি রাজ্যের অন্যান্য স্কুলের মতো দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক গার্লস হাই স্কুলেও পালন করা হয় এ বছরের ‘স্টুডেন্টস উইক’। প্রতি দিন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয় স্কুলে। সহ-প্রধানশিক্ষিকা অজন্তা চৌধুরী জানান, স্টুডেন্টস উইকের প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠের পাশাপাশি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা অপর্ণা মণ্ডল সিন্হাও পড়ুয়াদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। একই দিনে বই বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষিকারা।
সরকারি নির্দেশিকায় ‘স্টুডেন্টস উইক’-এ রাজ্যের সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিকে নানা বিষয়ে কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়। এর মধ্যে অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি পরিবেশ সম্পর্কিত কর্মসূচির উপরে বিশেষ জোর দিয়েছে যোধপুর পার্ক গার্লস হাইস্কুল। সহ-প্রধানশিক্ষিকার কথায়, “আমরা সকলেই জানি, পৃথিবী জুড়ে বিশ্ব উষ্ণায়নে জেরবার মানুষ। তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পরিবেশ রক্ষাই একমাত্র উপায়। তাই আমরা ছোটদের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে চাই।” এর জন্য, গত ৬ জানুয়ারি স্কুলে ‘নেচার স্টাডি’ করে পড়ুয়ারা। অজন্তা বলেন, “আমাদের স্কুলের ভিতরেই অনেক গাছপালা। নেচার স্টাডি মানে তো চারপাশের পরিবেশ-প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া। তাই আমাদের শিক্ষিকারা এই দিন স্কুল প্রাঙ্গণে কী কী গাছ আছে, বৃক্ষরোপণ এবং তাদের কী ভাবে পরিচর্যা করতে হয়— এই সমস্ত বিষয় পড়ুয়াদের শেখান।”
বৃক্ষরোপণ। নিজস্ব চিত্র।
সহ-প্রধানশিক্ষিকা জানান, একই দিনে আয়োজন করা হয় স্লোগান এবং পোস্টার লেখার প্রতিযোগিতাও। বিষয়— পরিবেশ সুরক্ষা। অংশগ্রহণ করে ২০ জন ছাত্রী। তাদের স্লোগান ও পোস্টারে উঠে আসে ‘সেভ আওয়ার প্ল্যানেট’, ‘আর্থ উইদাউট ওজ়োন ইজ় এ হাউস উইদাউট রুফ’, ‘ইউজ় রিসাইকেল্ড প্রোডাক্ট’, ‘সেভ ওশান’-এর মতো নানা বার্তা। শিক্ষিকার কথায়, “শিশুরাই তো ভবিষ্যৎ। তাই ছোটদের মনে এই সচেতনতা তৈরি করতে পারলে বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তাই আমরা এ বছর এই বিষয়েই বেশি জোর দিয়েছি।” তিনি জানান, এ ছাড়াও সপ্তাহভর কর্মসূচিতে স্কুলে ‘গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি’, পড়া ও লেখার প্রতিযোগিতা, গল্প বলার প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা এবং খাদ্যমেলার আয়োজন করা হয়। শেষ দিনে ছিল পুরস্কার বিতরণী।