পরীক্ষাকেন্দ্রে রানিমা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ শ্বশুর ও স্বামীর বিরুদ্ধে। ‘নীতি পুলিশ’দের সেই ‘বাধা’ অগ্রাহ্য করে পুলিশের সহায়তায় ওই পরীক্ষার্থী পৌঁছলেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিনে এমনটাই ঘটেছে নদিয়ার তেহট্টের মুরুটিয়ায়।
কিশোরী রানিমা খাতুনের বাড়ি মুরুটিয়ায়। তার বিয়ে হয়েছে ওই এলাকারই যুবক সাহারুল শেখের সঙ্গে। রানিমা এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু সোমবার পরীক্ষা শুরুর দিনেই ঘটে বিপত্তি। রানিমার অভিযোগ, সে যখন স্কুলপোশাক পরে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হচ্ছিল তখন তাকে বাধা দেন তার স্বামী সাহারুল এবং তার শ্বশুর নজরুল শেখ। রানিমার বক্তব্য, লকডাউন পরিস্থিতি থাকায় তাকে স্কুলে যেতে হয়নি। ফলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও টেরও পাননি সে এ বারের মাধ্যমিক দেবে। স্ত্রীর পরীক্ষার কথা জানার পর সাহারুল বলেন, ‘‘বাড়ির বউ সংসার করবে। পরিবারের বউয়ের পড়াশোনার কোনও সুযোগ নেই।’’
সোমবার শ্বশুরবাড়ির ‘বাধা’ পেয়ে সাহস হারায়নি মুরুটিয়া হাই স্কুলের ছাত্রী রানিমা। বিষয়টি হোয়াটস্অ্যাপে মেসেজ করে মুরুটিয়া থানা এবং নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য টিনা ভৌমিক সাহাকে জানায় সে। তার অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয় প্রশাসন। বিষয়টি জানানো হয় স্কুল পরিদর্শক, পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জ এবং রানিমার স্কুলের প্রধানশিক্ষককে।
এর পর রানিমাকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে গুয়াবাড়ি হাই স্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয় মুরুটিয়া থানার পুলিশ। সকাল থেকে টানা স্নায়ুযুদ্ধে খানিকটা বিধ্বস্ত রানিমা। তার কথায়, ‘‘আমি বিয়ে করতে চাইনি। আমি চাই না সংসার করতে। পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’’
করিমপুর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও শামসুজ্জামানের বক্তব্য, ‘‘যথা সময়ে খবর না পাওয়ায় বাল্যবিবাহ আটকানো সম্ভব হয় না। কিন্তু খবর পেলেই যে প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ করে তা প্রমাণ করছে আজকের ঘটনা।’’
রানিমার এমন সাহস দেখে সকলেই কুর্নিশ করছেন। কারও কারও বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা শুরুর আগেই স্টার মার্কস পেয়েছে রানিমা।’’