বাড়ির দাওয়ায় অপেক্ষায় রামচাঁদ।
সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু কিস্তির পুরো টাকা না মেলায় সেই বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। আপাতত এক চিলতে বাড়িতেই থাকছেন পরিবার নিয়ে। দাওয়ায় বসে গামছায় মুখের ঘাম মুছে রামচাঁদ বাইতি বললেন, ‘‘লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে বলে শুনছি। এ বার দেখছি না খেয়েই মরতে হবে।’’
দিনকয়েক আগেও সকাল হলেই ঢাউস কেটলি হাতে বেরিয়ে পড়তেন লালবাগের দিঘিরপাড়ার বাসিন্দা রামচাঁদ। এ পাড়া, সে পাড়া ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন। লালবাগের অফিস পাড়া সরগরম হয়ে উঠত রামচাঁদের ‘গরম চা, গরম চা’ হাঁকে। তাঁর হাতের মশলা চা না খেলে কাজে বসার মেজাজটাই পেতেন না অনেক ‘সরকারি বাবু’। কিন্তু আপাতত সে সব বন্ধ। এক চিলতে বাড়ির এক কোনে পড়ে থাকা, কেটলি, স্টোভে এখন ধুলো জমছে। দিন কয়েক আগেও যে রামচাঁদ সন্ধেয় খালি কেটলি নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেন, এখন সেই মানুষটার মুখেই কালো মেঘ। গত তিন সপ্তাহ ধরে বাড়িতেই শুয়েবসে সময় কাটছে তাঁর। রামচাঁদ বললেন, ‘‘বড় ছেলেটা স্নাতক পাশ করেছে। টাকার অভাবে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি ওর। ছেলেটা যদি তবু কোনও কাজটাজ করত, এত চিন্তা হত না। চারটে পেট চালাতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করি। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। স্ত্রী বাড়িতে বিড়ি বেঁধে সামান্য আয় করত। এখন সেটাও বন্ধ। চিন্তায় চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গিয়েছে।’’
আগে লালবাগের এক পোশাকের দোকানে কাজ করতেন রামচাঁদ। রোজগার বাড়াতে এক সময় রাজমিস্ত্রির জোগাড়েরও কাজও করেছেন। রামচাঁদের স্ত্রী মাধুরী বলছিলেন, ‘সরকারি আপিসে ঝাঁপ পড়ে যাওয়ায় ও (রামচাঁদ) ভেবেছিল, আবার করনিক, হাতুড়ি হাতে তুলে নেবে। কিন্তু করোনার ভয়ে তো এখন সবই বন্ধ। একটা ইটও গাঁথা হচ্ছে না কোথাও। আপাতত কয়েকশো টাকা ধার করে কয়েক দিনের চাল-ডাল কিনেছেন। জানেন না সামনে কী দিন পড়ে আছে!