বহরমপুরে ফলের বাজারে লোক নেই। নিজস্ব চিত্র
মাসাধিক সময় ধরে চলছে লকডাউন। পকেটে টান পড়েছে মধ্যবিত্তের। কিভাবে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় হবে সেই চিন্তায় কালঘাম ছুটছে নিম্নবিত্তের মানুষের। অনেকের আবার ভরসা রেশনের খাদ্যসামগ্রী বা ত্রাণসামগ্রী। এ রকম পরিস্থিতিতে বাজারে অল্প হলেও দাম বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর।
এ দিকে চলছে রমজান মাস। ফলে চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন মরসুমি ফল, মাছ, মাংস, লাচ্চা-সিমাইয়ের। সবেরই কিছু না কিছু দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে আমজনতা। হরিহরপাড়া, নওদা, বেলডাঙা, ডোমকলের বাজারে মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। মাস দেড়েক আগেও যে মাংসের দাম ঠেকেছিল তলানিতে।
কেন দাম বাড়ল? মাংসের কারবারিরা বলছেন, করোনার আতঙ্ক মাস দু’য়েক আগে মুরগির মাংসের চাহিদা একেবারে কমে গিয়েছিল। খামার ফাঁকা করতে কম দামেই মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। তার পরে এখন চাহিদা বাড়ায় জোগান কম। তাই দামও বেড়েছে। মাসাদুল শেখ নামে এক মুরগির কারবারি বলছেন, ‘‘এখন জোগান কমেছে, তা ছাড়া, রোজার মাসে মাংসের কিছুটা হলেও চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বেড়েছে মুরগির মাংসের।’’
লকডাউনের কারণে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের জোগান কমেছে। ভিন্ রাজ্য থেকে যে মাছ আসত, তাও নেই। ফলে চাহিদা ও দাম দু’টোই বেড়েছে। কিছু কিছু বাজারে স্থানীয় জলাশয়ের মাছ সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে। কিন্তু বেশিরভাগ বাজারেই মাছের জোগান কম। বাটা, পোনা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি, রুই, কাতলা বিকোচ্ছে ৩০০ টাকার আশেপাশে।খাল-বিল, নদীর মাছের যোগান থাকলেও দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি।
অধিকাংশ বাড়িতে ইফতারের আয়োজনে মুড়ির সঙ্গে গরম তেলে ভাজা, বিশেষ করে পেঁয়াজি, চপ, বেগুনি ছিল অত্যাবশ্যক। তবে লকডাউনে বন্ধ তেলেভাজার দোকান। ইফতারের সময় পাতে পড়ছে না গরম তেলেভাজা। মুড়ি, চানাচুর আর ফল দিয়েই করা হচ্ছে ইফতার।
দাম বেড়েছে ফলেরও। সাধারণ মানের খেজুর বিকোচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে। আর একটু ভাল মানের খেজুর হলেই তার দাম কেজি প্রতি আড়াইশোর বেশি। এ দিন ফলের বাজার দর ছিল শশা ৩০ টাকা, তরমুজ ২০ টাকা, মোসাম্বি ১০ টাকা প্রতিটি, কলা ৩০ টাকা ডজন, যা স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা হলেও বেশি। তবে আপেল বিকোচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে। আঙুর ১০০ টাকা কেজি, অর্থাৎ স্বাভাবিক দামেই। হরিহরপাড়ার ফল ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলছেন, ‘‘লকডাউনের ফলে জোগান কম। তাতেই জিনিসের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি। আবার মানুষের হাতে টাকাও নেই, তাই রোজার মাসেও মন্দা ফলের বাজারে।’’
রোজার মাসে লাচ্চা-সিমাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। যদিও আর্থিক সঙ্কটের কারণে চাহিদা কমেছে অনেকটাই। তবে দামও বেড়েছে অনেকটাই। ব্যবসায়ীরা বলছেন লকডাউনের কারণে কারখানা দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল, ফলে লাচ্চা-সিমাইয়ের জোগান কম রয়েছে, তাতেই দাম অন্য বছরের তুলনায় বেড়েছে অনেকটাই। হরিহরপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম সেখ বলছেন, ‘‘লকডাউনের কারণে বন্ধ রোজগার। জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। কি করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে।’’ তবে জিনিসপত্রের কালোবাজারি রুখতে বিভিন্ন দোকানে নজরদারি চালাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি, এতে কালোবাজারির কোনও প্রশ্ন নেই।