West Bengal Lockdown

ভিন্ রাজ্যে বাবা, আইসক্রিমে আয় খুঁজছে ছেলে

পঞ্চম থেকে সপ্তম ক্লাশে পড়া ছেলেপুলের দল সাত থেকে দশ জনের সংসার টানতে তাই এখনই সাবালক হয়ে উঠেছে!

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

মেরেকেটে সপ্তম শ্রেণি। ভাঙা স্পোকের সাইকেলের নড়বড় কেরিয়ারে আঁটোসাঁটো বাঁধা একটা নোংরা থার্মোকলের বাক্স। ঢাকনা খুললেই বৈশাখী গরমের তাপটুকু হুহু করে শুষে নিচ্ছে দু`টাকার রংগোলা প্রাণ জুড়োনো আইসক্রিম। সেই ভাঙা সাইকেলে দুপুরের গ্রামীণ গলি এঁকে বেঁকে ঘুরে ঠান্ডা ফিরি করে সন্ধের বাড়িতে গরম ভাত। লকডাউনের শূন্যরুজির বাজারে স্কুলহীন সাহানুর শেখের হালের যাপন চিত্র।

Advertisement

সাহানুর একা নয়, হরিহরপাড়ার আশপাশের গ্রামে ভরদুপুরে পা রাখলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমনই অজস্র সাহানুরের খোঁজ মিলছে এখন। যাদের বয়স আর শ্রেণির সামান্য অদলবদল থাকলেও বাকিটা একইরকম। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে ভিন-রাজ্যে গিয়ে ফিরে আসা সুদূর হয়ে গিয়েছে। পঞ্চম থেকে সপ্তম ক্লাশে পড়া ছেলেপুলের দল সাত থেকে দশ জনের সংসার টানতে তাই এখনই সাবালক হয়ে উঠেছে! ঘরের নড়বড়ে সাইকেলখানা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আইসক্রিম বিক্রেতা হয়ে। যা একই সঙ্গে আয়হীন পরিবারগুলিতে উনুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে তেমনই বন্ধ আইসক্রিম কারখানায় আয় হচ্ছে সামান্য। হরিহরপাড়ার এক আইসক্রিমের মিল মালিক বলেই ফেলছেন, "প্রতি বছর রোজার মাসে এ সময়ে দেদার বিকোয় আইসক্রিম। কিন্তু লকডাউন সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। কারখানা বন্ধই করে দিয়েছিলাম। রোজার মাস, ছেলেগুলোর দু`পয়সা আয় হবে ভেবে মেশিন চালিয়েছি। আমারও দু-চার টাকা আয় হচ্ছে।`` সরিফুল ইসলামের মা বলছেন, "ওদের বাপ ভিন্ রাজ্যে পড়ে আছে। টাকাও পাঠাতে পারছে না। ছেলেটার আইসক্রিম বিক্রির রোজগারেই পেট চলছে।" সরিফুল ইসলাম তার আইসক্রিম বোঝাই সাইকেলটা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বলে, ‘‘বাবা লছিমন চালান। এখন তা কোনও কাজ নেই। বাবা অন্য রাজ্যে গিয়েছেন। আর আমি আইসক্রিম বিক্রি করছি। যা রোজগার হবে তা দিয়েই তিন ভাইবোনের ইদের বাজার হবে।’’

স্কুল কবে খুলবে ওরা কেউ জানে না। করোনার ছায়ায় লম্বা লকডাউনের বিরাম নেই। অনলাইনে পড়াশোনার বালাই এ তল্লাটে তেমন নেই। তাই রুজির উপায় খোঁজাই বড় হয়ে উঠেছে ওদের কাছে। হরিহরপাড়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ মণ্ডল এবং এইচএবি সিনিয়র মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক সমস্বরে বলছেন, "এলাকার অধিকাংশ পরিবারেরই দিন আনি দিন খাই অবস্থা। লক ডাউনে সেটুকুও বন্ধ। ফলে পড়ুয়ারা রোজগারের দিকে ঝুঁকছে। স্কুল খুললে তারা যাতে ফের স্কুলমুখী হয় সেদিকে নজর দেওয়া হবে।" হরিহরপাড়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুশান্ত মণ্ডল বলেন, "ওরা স্কুলছুট রুখতে নানা প্রকল্প চালু করেছে সরকার। তবে এই সমস্ত পড়ুয়ারা যাতে ফের স্কুলছুট না হয়ে পড়ে তার জন্য প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নজর দিতে বলা হয়েছে, দেখা যাক ওদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনা যায় কি না।’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement