প্রতীকী ছবি।
করোনার ছায়ায় কাটমানি দোসর!
লকডাউন শিথিল হতেই বিভিন্ন জেলায় থমকে থাকা প্রকল্পে গতি আনতে নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন। জেলা পরিষদের হাতে টাকাও এসেছে কিছু। কিন্তু সেই সব প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার নাম করে কাটমানি কিংবা চলতি ভাষায় `তোলা` আদায়ের সম্ভাবনাও যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, ইতিমধিযেই লিফলেট বিলি করে সে প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে প্রশাসন। সেই সতর্কতার তালিকায় এ বার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের নবতম সতর্কতা হেল্প লাইন চালু করা। মজার ব্যাপার, মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ)সুদীপ্ত পোড়েল শুক্রবারই জানিয়েছেন, শুক্রবার হেল্পলাইন চালু হতেই আসতে শুরু করেছে অভিযোগও! তিনি বলেন, ``বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে লিফলেট দেওয়া হচ্ছে। এ বার হেল্পলাইন-ও চালু করা হল। শুক্রবার থেকে জেলা পরিষদের হেল্পলাইনে অভিযোগ আসতেও শুরু করেছে।’’ আর তা নিয়ে, করোনা-সঙ্কটের মধ্যেই কাটমানিক জুজু দেখে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
বিরোধীদের কটাক্ষ, সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের স্বচ্ছভাবমূর্তি দেখাতে গত বছর থেকে নাটক শুরু করেছে শাসক দল তৃণমূল। গত বছর দলনেত্রী কাটমানি ফেরানোর কথা বলার পরে কত কাটমানি ফেরত পেয়েছেন তার কোনও হিসেব নেই। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘ভোটের আগে স্বচ্ছতার নামাবলি গায়ে দিতে এ সব নাটক করছে। গত বছরও জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাটমানির বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছিলেন। সেই সব অভিযোগের কী হয়েছে, তা জনগন আজও জানতে পারেননি। ফের নাটক শুরু হল।’’ গত বছর কাটমানি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছিল জেলা পরিষদ। বলা বাহুল্য, সেখানে জমা পড়েছিল একের পর এক অভিযোগ। তবে তা নামেই, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। সভাধিপতি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘গত বছর আমরা ১৩৫টি অভিযোগ পেয়েছিলাম। তার মধ্যে কিছু অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন। যে সব অভিযোগের সারবত্তা ছিল সেগুলির ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর নওদার একটি পঞ্চায়েতে সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় বাড়ি পাচ্ছিলেন না বলে যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন তাঁদের বাড়ি দেওয়া হয়েছে।’’
করোনার ছায়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রুজিতে তীব্র টান পড়েছে। এই অবস্থা প্রশমণে বাংলা আবাস যোজনা যে কিঞ্চিত ক্ষতের উপর মলমের মতো কাজ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তৃণমূলের অন্দরের খবর, গত বছর এই প্রকল্পে টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাটমানি নেওয়ার আঙুল উঠেছিল দলীয় নেতা থেকে জনপ্রতিনিধিদের একাংশের বিরুদ্ধে। এ বার তার পুনরাবৃত্তি হলে ফল যে মারাত্মক হবে তা আঁচ করেই এই সতর্কতা। জেলা তৃণমূলের এক তাবড় নেতা বলেন, ``বাংলা আবাস যোজনায় প্রান্তিক মানুষকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন জায়গায় এক শ্রেণির নেতাকর্মী উপভোক্তাদের কাছ থেকে যে দেদার টাকা তুলছিল তা সকলেই জানেন। ফলে মানুষের মনে দলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ জমেছে। তা মাথায় রেখেই কাটমানি ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন দিদি। এ বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেও সে ব্যাপারে আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন।`` দিন দুয়েক আগে ভিডিয়ো বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জেলাপরিষদ ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের, সামাজিক প্রকল্পে দুর্নীতি বরদাস্থ করা হবে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই নির্দেশ পেতেই মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের হেল্পলাইনের উদ্যোগ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ভিডিয়ো বৈঠকে আমাদের পরিস্কার বলেছেন, বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণ করতে হবে, কাজ করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে। কোনও জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ যাতে উপভোক্তার কাছ থেকে উপঢৌকন না নেন তা দেখতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নালিশ জানানোর প্রশ্নে এই উদ্যোগ।’’
বাংলা আবাস যোজনায় দুঃস্থ মানুষের গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী কয়েক দিনেই। জানা গিয়েছে, আগামী দু’বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় ১লক্ষ ৮৬হাজার উপভোক্তাকে বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়া হবে। এ বছর ১লক্ষ ১৫হাজার বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। এত বিপুল সংখ্যক বাড়ির অনুমোদন পেলেও তার উপরে কাটমানির ছায়া যে প্রলম্বিত, হেল্পলাইন চালু হতেই তা মালুমও হচ্ছে!