Beldanga

Beldanga: দৈনিক রোজগার ৪৫০ টাকা! রাজমিস্ত্রির কাজ করে দিন চলে উপপ্রধান মানবের

বিকেলের পরে পঞ্চায়েতের কাজ করতে দলীয় কার্যালয়ে যেতে হয়। নিজের বাড়িতে একটি ঘরে কোনও রকমে স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে বসবাস করেন।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৭:০৫
Share:

উপপ্রধান মানব। নিজস্ব চিত্র।

কাজ করতে গিয়ে দোতলা থেকে পড়ে যাওয়ার কথা এখনও তিনি ভোলেননি। সেই ২০০৭ সালের ২৬ জানুয়ারি। বহরমপুরের ভাকুড়ি ঘোষ পাড়ার ঘটনা। মানব কবিরাজের কথায়, “বাঁশের উপর দাঁড়িয়ে কাজ করছিলাম। দোতলার উপর সেন্টারিং-এর কাজ। আচমকা দোতলার উপর থেকে নীচে কী ভাবে পড়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। পরে টানা হাসপাতালে ভর্তি থেকে সুস্থ হয়েছি।”

Advertisement

তাঁকে এখন অনেকেই চেনেন।

বেলডাঙার নওদা গ্রামের বাসিন্দা মানব কবিরাজ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন ১৯৯৩ সাল থেকে। এখনও করেন। দৈনিক আয় ৪৫০ টাকা। তিনি বেলডাঙা ১ ব্লকের চৈতন্যপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান। পঞ্চায়েতের বৈঠক থাকলে সেই মজুরি মেলে না।

Advertisement

রাজ্যের নানা প্রান্তে দলের নেতাদের প্রাসাদোপম বাড়ি। সম্পত্তি নিয়ে লোকে যেখানে নানা কথা বলে। সেখানে ব্যতিক্রম বলা যায় উপপ্রধান মানবকে।

ভোর থেকে তাঁর দিনের সূচনা। সকালে উঠে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েতের নানা পরিষেবা দেন। নানা শংসাপত্র দেন। এ ছাড়াও অন্য পরিষেবা দেওয়ার থাকে। সকাল ৭টা থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ।

বিকেলের পরে পঞ্চায়েতের কাজ করতে দলীয় কার্যালয়ে যেতে হয়। নিজের বাড়িতে একটি ঘরে কোনও রকমে স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে বসবাস করেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বর্ষে গ্রামের ৮৪ জনকে আবাস যোজনার ঘরের জন্য আবেদন করেছেন। তার কথায়, “আমি নিজে সমীক্ষা করেই এদের নাম পঠিয়েছি।”

আপনার নিজের জন্য পাঠাননি?

উত্তর, ‘‘আমার মতো অনেকেই আছেন। তাঁদের ঘর নেই। তাঁদের কী উত্তর দিতাম।’’

গ্রামের মানুষ জানাচ্ছেন অতীতে এই সংসদে সিপিএম কংগ্রেসের কাছে হারে পঞ্চায়েতের ভোটে। এলাকায় উন্নয়ন হয়নি। পরে ২০১৮ সালে তৃণমূলের পঞ্চায়েত গঠন হয়। তারপর থেকে এলাকায় কাজ হয়েছে। সেই কাজের কৃতিত্বের অংশীদার মানব কবিরাজ। গ্রামে ঢালাই রাস্তা, নিকাশি নালা, পথবাতি হয়েছে। এই গ্রামে বর্ষায় হাঁটা যেত না। কেউ প্রবেশ করতে পারত না। রাস্তা হওয়ার পর গ্রামের মানুষের উন্নতি হয়েছে। গ্রামের প্রায় ১২০০ মানুষের বসবাস। গ্রামের মানুষ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “মানব খুব ভাল ছেলে। পঞ্চায়েতের উপ প্রধান হয়েও প্রতিদিন রাজমিস্ত্রির কাজ মন দিয়ে করে। না হলে সংসার চলবে কী ভাবে।”

গ্রামের হরিদাস বিশ্বাস, তপন মণ্ডল জানাচ্ছেন, সত্যি উপপ্রধান হয়ে সার্বিক কাজ করেন এই মানব কবিরাজ। গ্রামে বর্তমানে যে বাড়িতে কাজ করছেন, সেই বাড়ির সদস্য নিতোষী মণ্ডল বলেন, “উনি যে কাজই করেন মন দিয়ে করেন। এই গ্রামের তিনি গর্ব।”

মানব বলেন, “২০০৮ সাল থেকে তৃণমূল করি। ২০১৮ সালে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছি। জিতে উপপ্রধান হয়েছি। মানুষের কাজ করার চেষ্টা করি। সংসারে অভাব রয়েছে। কিন্তু শান্তিতে আছি।”

বেলডাঙা ১ ব্লক (উত্তর) তৃণমূল সভাপতি বনতোষ ঘোষ, বেলডাঙা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, “ওই উপপ্রধান ভাল কাজ করছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement